গাড়ি থেকে ছুটে এল গুলি
Jalangi

চেনা চেহারায় ডোমকল, পড়ল বোমা, পুড়ল বাইক

জলঙ্গির সাহেবনগরে রাজ্য সড়কের উপরে কয়েকটি বেঞ্চ পেতে নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করে অবরোধ শুরু করেন ‘নাগরিক মঞ্চ’ নামে স্থানীয় একটি সংগঠনের কয়েক জন সদস্য।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

সাহেবনগর শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৫৯
Share:

ঝলসানো-সকাল: সাহেবনগরের রাস্তায় জ্বলছে মোটরবাইক। (ইনসেটে) সাহেবনগরে রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছে বোমা ও গুলির খোল। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম।

সকাল তখন সাড়ে আটটা। জলঙ্গির সাহেবনগরে রাজ্য সড়কের উপরে কয়েকটি বেঞ্চ পেতে নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করে অবরোধ শুরু করেন ‘নাগরিক মঞ্চ’ নামে স্থানীয় একটি সংগঠনের কয়েক জন সদস্য। কিছু ক্ষণের মধ্যেই এলাকায় স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা ও তাঁর অনুগামীরা একটি ছোট গাড়িতে করে এসে অবরোধ তুলতে হুমকি দেন বলে দাবি। তাই নিয়ে বচসা শুরু হয়। চালানো হয় গুলিও। উত্তপ্ত হয়ে ওটে পরিবেশ। তখন ছোট গাড়িটি তৃণমূল নেতাদের নিয়েই এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যায়। সেই সময় সাহেবনগর মোড় থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে মসজিদ পাড়ার কাছাকাছি গুলিবিদ্ধ হন স্থানীয় একটি মসজিদের মোয়াজ্জিন আনারুল বিশ্বাস (৬১)। তাঁর ভাইয়ের দাবি, ‘‘ওই গাড়ি থেকেই এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়া হচ্ছিল। তাতেই আমার দুই দাদা গুলিবিদ্ধ হন। তার মধ্যে আনারুল মারা যান।’’ ওই একই সময় ঘটনাস্থলের কিছু দূরে সাহেবনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান তামান্না ইয়াসমিনের বাড়ি। সেখানেই বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সালাউদ্দিন শেখ (১৯) নামে এক যুবক। তামান্না বলেন, ‘‘কে গুলি করেছে জানি না। সকাল থেকেই এলাকা উত্তপ্ত ছিল। আমরা এক রকম গৃহবন্দি।’’

Advertisement

এলাকা যে উত্তপ্ত ছিল তার প্রমাণ গুলিতে গুরুতর জখম হয়েছেন আরও তিন জন। তাঁদের একজন হলেন তৃণমূলের জলঙ্গি উত্তর জোন-এর সভাপতি তহিরুদ্দিন মণ্ডলের ভাই মন্টু মণ্ডল। আহত হয়েছেন আনারুলের ভাই আলাউদ্দিন বিশ্বাস এবং সাহেবনগরেরই বাসিন্দা মিজানুর রহমান। তিন জনকেই বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার অজিত সিংহ বলেন, ‘‘দু'পক্ষের মধ্যে বিবাদ থেকেই গন্ডগোল। দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে কোনও পক্ষই এখনও অভিযোগ দায়ের করেনি। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।’’

সকালে ঘটনার খবর পেয়ে জলঙ্গি থানার পুলিশকর্মীরা দু’টি মারুতি ভ্যানে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাঁদের উপরেও চড়াও হয় জনতা। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের ভাড়া করা দু’টি গাড়ি, পুড়িয়ে দেওয়া হয় একটি মোটর বাইক। অবস্থা বেগতিক দেখে আধ ঘণ্টার মধ্যেই গাড়ি ফেলে এলাকা ছাড়ে পুলিশ। নদিয়া-মুর্শিদাবাদ রেঞ্জের ডিআইজি মুকেশ কুমার এবং জেলার পুলিশ সুপার অজিত সিংহ যাদব বিরাট পুলিশ বাহিনী নিয়ে এলাকায় পৌঁছন। সাহেবনগর-জলঙ্গি সড়ক জুড়ে তখনও প্রবল উত্তেজনা। পুলিশ শেষ পর্যন্ত লাঠি চালিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। গ্রেফতার করা হয় তিন জনকে।

Advertisement

তহিরউদ্দিনের দাবি, ‘‘গোটা ঘটনা কংগ্রেস এবং সিপিএম পরিকল্পনা করে করেছে। তার পর আমার নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ জলঙ্গির তৃণমূল বিধায়ক আব্দুর রজ্জাক মণ্ডলেরও দাবি, ‘‘কিছু দুষ্কৃতী এনআরসি বিরোধিতার নামে গুন্ডামি করেছে।’’

তবে জলঙ্গি ব্লক কংগ্রেস সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা বলছেন, ‘‘তহিরউদ্দিন নাগরিক মঞ্চ তৈরি হতেই ভয় পেয়েছেন।’’ একই বক্তব্য বাম নেতা ইউনুস সরকারেরও। তিনিও তৃণমূলকে ঘটনার জন্য দায়ী করেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement