মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়িতে হামলার ঘটনায় বিজেপি জড়িত বলে সরাসরি অভিযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের ‘নব জোয়ার’ যাত্রায় মন্ত্রীর গাড়িতে হামলার ঘটনায় ধৃতের সংখ্যা বাড়ল। সিআইডি এ বার গ্রেফতার করল জয় মাহাতোকে, যিনি গত বছর ঝাড়গ্রাম পুরভোটে পদ্ম-প্রতীকে প্রার্থী হয়েছিলেন। বিজেপি অবশ্য তাঁকে দলের লোক বলে মানতে নারাজ। পাশাপাশি ওই হামলার প্রেক্ষিতেই কুড়মিদের সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সাংবাদিক বৈঠক করে দুঃখপ্রকাশ করলেন ঝাড়গ্রামের তৃণমূল জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ের পিছনে থাকা মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়িতে হামলার ঘটনায় বিজেপি জড়িত বলে সরাসরি অভিযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক নিজেও একই কথা বলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এ কাজ ‘কুড়মি ভাই-বোনেদের নয়’ বলার পরেও একের পর এক কুড়মি সামাজিক নেতার গ্রেফতারের পরে প্রশ্নও উঠছিল। সেই আবহেই এ বার জয়ের গ্রেফতারি। সিআইডির দাবি, মঙ্গলবার গভীর রাতে ঝাড়গ্রাম শহরের বংশী মোড় থেকে জয়কে ধরা হয়েছে। গত ২৬ মে গড় শালবনিতে হামলার এফআইআর-এ জয়ের নাম ছিল। এই নিয়ে কনভয়ে হামলায় ধৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১০জন।
জয় আগে ছিলেন তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম শহর আইটি সেলের আহ্বায়ক। শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী হিসেবে পরিচিত। পরে বিজেপিতে আসেন। গত বছর ঝাড়গ্রাম পুরভোটে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে পদ্ম প্রতীকে প্রার্থী হয়ে হেরে যান। এ দিন আদালত থেকে বেরিয়ে সিআইডির গাড়িতে ওঠার সময় জয় বলেন, ‘‘আগে বিজেপি করতাম। ঘটনার দিন ওখানে (গড় শালবনি) ছিলাম। তবে হামলার ঘটনায় আমি যুক্ত নই।’’
তবে বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুর দাবি, ‘‘জয় আমাদের দলের কোনও পদে নেই। দলের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্কও নেই।’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মুর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘হামলার ঘটনায় বিজেপি-যোগ স্পষ্ট হতেই এখন নিজেদের দলীয় কর্মীকে অস্বীকার করছে গেরুয়া শিবির।’’ আর রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘অমিত শাহের উপস্থিতিতে বিজেপি নেতাদের নিয়ে এক বৈঠকে আমাদের বলা হয়েছিল, কুড়মি আন্দোলন নিয়ে দল আগ বাড়িয়ে কিছু করবে না। আর যাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি মতাদর্শগত ভাবে বিজেপি হলেও হতে পারেন। তবে কুড়মি সত্তা থেকেই আন্দোলনে গিয়েছিলেন।’’
কুড়মি ক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে তৃণমূলের অন্দরেও। ঘটনার দিন কুড়মিদের মারধরের নিদান দিয়ে বিতর্কে জড়ান জেলা তৃণমূল সভাপতি নিজেই। তা নিয়ে জলঘোলা হচ্ছিল। বুধবার মানিকপাড়ার দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে ওই মন্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন দুলাল। বলেন, ‘‘ঘটনার আকস্মিকতায় বাড়তি কথা বলে ফেলেছিলাম। কুড়মি সমাজের মানুষজন হয়তো আঘাত পেয়েছেন। মন্তব্যের জন্য আমি ব্যথিত।’’
জয়কে এ দিন ঝাড়গ্রাম বিশেষ দায়রা আদালতে হাজির করে ৬ দিনের জন্য হেফাজতে নিয়েছে সিআইডি। জেলবন্দি কুড়মি নেতা রাজেশ মাহাতো ও শিবাজী মাহাতোকেও এ দিন জামবনি থানার পুরনো মামলায় ঝাড়গ্রাম সিজেএম আদালতে হাজির করানো হয়। তাঁদের ধৃত দেখিয়ে (শোন অ্যারেস্ট) জেল হাজতে পাঠায় আদালত।