Chokher Alo

Chokher Alo: চলবে শুধু চক্ষুপরীক্ষা, স্থগিত হয়ে গেল রাজ্যের ‘চোখের আলো’ প্রকল্প

লোগো এঁকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকল্পের নাম তাঁরই দেওয়া। স্বাস্থ্যকর্তারা ঘোষণা করেছিলেন, চোখের আলো প্রকল্পের জন্য আলাদা টাকা ও লোকবল বরাদ্দ হতে চলেছে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:৩২
Share:

প্রতীকী ছবি।

পরিকাঠামো নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে প্রভূত প্রতিশ্রুতি ও দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা-সহ ‘চোখের আলো’ প্রকল্প শুরু করেছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু তৃতীয় তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পাঁচ মাসের মধ্যে সেই স্বাস্থ্য দফতরই জানিয়ে দিল, চোখের আলো প্রকল্প আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে।

Advertisement

লোগো এঁকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকল্পের নাম তাঁরই দেওয়া। স্বাস্থ্যকর্তারা ঘোষণা করেছিলেন, চোখের আলো প্রকল্পের জন্য আলাদা টাকা ও লোকবল বরাদ্দ হতে চলেছে। চোখের সামগ্রিক চিকিৎসা পরিষেবা আরও শক্তিশালী করাই এর লক্ষ্য এবং বেশ কয়েক বছর চলবে এই প্রকল্প। কিন্তু গত ১৬ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য দফতরের এক নির্দেশিকায় রুটিনমাফিক চোখের চিকিৎসা কর্মসূচি শক্তিশালী করতে একটি মাইক্রোপ্ল্যান ঘোষণা করা হয়েছে। ২৭ সেপ্টেম্বর তা শুরু হচ্ছে। চলবে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। নতুন নির্দেশিকায় ‘চোখের আলো’ নামটি ব্যবহার হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় শিবির করে চক্ষু চিকিৎসকদের দিয়ে ছানি অপারেশন শুরু হয়েছিল চোখের আলোয়। মাইক্রোপ্ল্যানে তা বাদ গিয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় চিকিৎসকদের বদলে ব্লক প্রাথমিক বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অপটোমেট্রিস্ট বা মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের (অপটোমেট্রি) দিয়ে শুধু চোখ পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে।

প্রশ্ন উঠছে, চোখের আলোর কী হল? রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আগে থেকে চোখের যে-জাতীয় কর্মসূচি রয়েছে, সেটাকেই আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। এটা ‘চোখের আলো’ নাম দিয়ে তখন একটা ক্যাম্পেন মোডে করা হয়েছিল। কিন্ত সেটা এখন আর হচ্ছে না। এখন সাধারণ ভাবে করা হচ্ছে। ‘চোখের আলো’ বলে আর কিছু হচ্ছে না। ওটা এককালীন ছিল। আপাতত তা স্থগিত। ওটা নিয়ে আর এগোচ্ছি না।’’

Advertisement

স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়ে দেন, মাইক্রোপ্ল্যানে পাওয়ার পরীক্ষা, চশমার মাপ নেওয়া, ছানি পরীক্ষা এবং বাচ্চাদের চক্ষু পরীক্ষা হবে। সাবসেন্টার স্তরে এএনএম ও কমিউনিটি হেল্থ অফিসারেরা প্রাথমিক ভাবে রোগীদের চোখের ‘স্ক্রিনিং’ করবেন। তার পরে বাছাই করা রোগীদের ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠানো হবে। সেখানে অপটোমেট্রিস্টেরা চোখ পরীক্ষা করবেন। যাঁদের ছানি কাটার প্রয়োজন হবে, তাঁদের ব্লাড সুগার, ইসিজি-র মতো কিছু পরীক্ষাও হবে সেখানে। অপটোমেট্রিস্টেরা ব্লকের সব প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঘুরিয়েফিরিয়ে মাসে এক দিন বা দু’দিন বসবেন।

কিন্তু হঠাৎ কী হল যে, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত ‘চোখের আলো’ থেকে স্বাস্থ্য দফতরকে সরে আসতে হচ্ছে?

স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ‘চোখের আলো’ ঘোষিত হওয়ার পরেই প্রশ্ন উঠেছিল, জাতীয় অন্ধত্ব নিবারণ কর্মসূচি থাকা সত্ত্বেও আবার একটি নতুন প্রকল্পের অর্থ কী? এতে নতুন কী হবে? নতুন কিছু যদি না-হয়, তা হলে এর আলাদা নামই বা হবে কেন? কেন্দ্রীয় কর্মসূচির টাকা কেন এই প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে? সেই সময় স্বাস্থ্যসচিব জানিয়েছিলেন, এর জন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দ করা হবে। কিন্তু ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির বিভিন্ন প্রকল্পের ধাক্কায় এখন চোখের আলোর জন্য আলাদা করে অর্থ বরাদ্দ করতে অসুবিধা হচ্ছে। সরকার চাইছে না, বিষয়টি নিয়ে বিরোধী শিবির কিছু বলার সুযোগ পাক।

দ্বিতীয়ত, করোনা আবহে শিবির করে ছানি অস্ত্রোপচারে সমস্যা হচ্ছে। অধিকাংশ সরকারি চোখের ডাক্তার নিজের হাসপাতালের কাজের বাইরে কোনও শিবিরে যেতে চাইছেন না।

তৃতীয়ত: চোখের আলো ধাক্কা খাচ্ছিল মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (অপটোমেট্রি) বা অপটোমেট্রিস্টের আকালে। ভবানীপুরে উপনির্বাচনের আগে বিরোধী শিবির যাতে এটা নিয়ে কোনও নেতিবাচক প্রচার চালাতে না-পারে, তাই মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া নামের প্রকল্প স্থগিত রাখা হয়েছে।

রাজ্যে অনুমোদিত অপটোমেট্রিস্ট-পদ ৫০৩টি। তার মধ্যে ১৯৪টিই ফাঁকা। এ বছরের শেষে খালি পদের সংখ্যা হবে ২১০। গত ১৮ বছর কোনও নতুন পদ অনুমোদিত হয়নি। গত প্রায় ন’বছর স্থায়ী পদে কোনও নিয়োগও হয়নি। বহু সাবসেন্টারে কোনও অপটোমেট্রিস্ট নেই। অনেক ক্ষেত্রে এক জন অপটোমেট্রিস্ট একাধিক জায়গায় ডিটেলমেন্টে কাজ করে কোনও রকমে ঠেকনা দিচ্ছেন। এই লোকবল নিয়ে চোখের আলো বা প্রস্তাবিত মাইক্রোপ্ল্যান— কোনওটাই রূপায়ণ করা সম্ভব নয় বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের জানিয়েছে তৃণমূলপন্থী ‘ওয়েস্টবেঙ্গল প্রোগ্রেসিভ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement