হাম থেকে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস হয়ে ডিপিট বুস্টারের মতো নানান টিকা নির্দিষ্ট সময় অন্তর নবজাতককে দেওয়াই দস্তুর। কিন্তু রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকে বেশ কিছু
টিকা প্রদান কর্মসূচি অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, দিল্লি থেকে টিকার সরবরাহ অপ্রতুল বলেই ব্যাহত হচ্ছে
জরুরি টিকাকরণ।
শিশু ভূমিষ্ঠ হলে নিয়মিত টিকাকরণের বিবরণ সংবলিত কার্ড দেওয়া হয় প্রসূতিদের। সেই কার্ড অনুযায়ী জন্মের ন’মাসের মাথায় জাপানি এনসেফ্যালাইটিস (জেই) টিকা দেওয়ার কথা। দ্বিতীয় জেই টিকা ১৬-২৪ মাসের মধ্যে। ১৬-২৪ মাসের মধ্যে ডিপিটি (ডিপথেরিয়া, পার্টুসিস ও টিটেনাস) বুস্টার প্রথম মাত্রা পাওয়ার কথা শিশুদের। ডিপিটি বুস্টারের দ্বিতীয় মাত্রা দিতে হয় শিশুর পাঁচ-ছ’বছর বয়সে। স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা জানাচ্ছেন, সরবরাহ কম বলে রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্লকে সরকারি টিকাকরণের বিধি মেনে শিশুদের জেই এবং ডিপিটি বুস্টারের টিকা দেওয়া যাচ্ছে না। এমনকি ‘ভিটামিন এ’ তেলও অমিল।
পশ্চিম মেদিনীপুরে দাঁতন দু’নম্বর ব্লকে এক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, প্রায় দু’মাস ধরে জেই এবং ডিপিটি বুস্টার না-পেয়ে মায়েরা ঘুরে যাচ্ছেন। সময়ে টিকা না-দেওয়ায় বাচ্চাদের কোনও অসুবিধা হবে কি না, তা ভেবে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন অনেক মহিলা। জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি ব্লকের এক স্বাস্থ্যকর্মীর কথায়, ‘‘ডিপিটি বুস্টার না-পেয়ে যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরা বাইরে থেকে টিকা কিনছেন।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, হুগলির পুরশুড়ার শূরের পাড়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ছিল ‘ভিলেজ হেল্থ নিউট্রিশন ডে’ (ভিএইচএনডি)। টিকার জোগান না-থাকায় ওই শিবিরে উপস্থিত সব শিশুকে হামের টিকা, ডিপিটি বুস্টার ও জেই টিকা দেওয়া যায়নি বলে অভিযোগ।
হাওড়ার জগৎবল্লভপুরে স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ জানান, একেই তো গ্রামীণ এলাকায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বাচ্চাদের টিকা দিতে আপত্তি আছে। তার উপরে টিকা না-পেয়ে মায়েরা এক বার ফিরে গেলে দ্বিতীয় বার তাঁদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টেনে আনতে খুব সমস্যা হয়।
শুধু টিকা নয়, ভিটামিন ‘এ’ অয়েলের সরবরাহ নিয়েও অভিযোগ রয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের। পূর্ব মেদিনীপুরের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের এক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, প্রতি বছর ছ’মাস অন্তর বাচ্চাদের ভিটামিন ‘এ’ অয়েল দেওয়ার জন্য শিবির হয়। জোগান না-থাকায় গত ডিসেম্বরে শিবির করা যায়নি। একই অভিযোগ পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়া ও মুর্শিদাবাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের।
শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘জেই, ডিপিটি বুস্টার দিতে একটু দেরি হলে সমস্যা নেই। তবে সেটা না-হওয়াই ভাল। মানুষের আস্থার অভাব দেখা দেয়।’’
টিকা হোক বা ভিটামিন তেল—জোগানে টান কেন? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে আঙুল তোলা হচ্ছে দিল্লির দিকে। বলা হচ্ছে, দিল্লি থেকে টিকা সরবরাহ করা হয়। সেই সরবরাহ ঠিক না-থাকায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।
স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের অভিমত, ব্লক স্তরে কোন টিকা কত মজুত আছে, সেই তালিকা ঠিক সময়ে স্বাস্থ্য ভবনে জমা পড়লে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব। এই ধরনের পরিকল্পনায় ঘাটতিও সমস্যার একটি কারণ বলে মনে করছেন তাঁরা। ভিটামিন ‘এ’ অয়েল প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, দরপত্র নিয়ে জটিলতার জেরে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে বলেই আশা করছে স্বাস্থ্য ভবন।