child marriage

লকডাউনের সুযোগে রাজ্য জুড়ে নাবালিকা বিয়ের অভিযোগ

পুলিশ সূত্রের খবর, হিঙ্গলগঞ্জ থানা এলাকার হরিদাসকাটি গ্রামে সম্প্রতি এমনই ঘটনা ঘটেছে।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২০ ০৪:৫৩
Share:

প্রতীকী ছবি

দেশ জুড়ে লকডাউনও থামাতে পারল না নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার মানসিকতা!

Advertisement

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৩ মার্চ থেকে শুরু হওয়া লকডাউন চলাকালীনই একের পর এক নাবালিকার বিয়ের খবর আসছে প্রশাসনের কাছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকে দিয়ে বিয়ে বন্ধ করা গেলেও অনেক ক্ষেত্রে লকডাউনের জন্য কার বাড়িতে কী হচ্ছে, তা প্রতিবেশীরাও জানতে পারছেন না। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু পরিবার চুপিসারে বিয়ের আয়োজন করে ফেলছে বলে অভিযোগ।

পুলিশ সূত্রের খবর, হিঙ্গলগঞ্জ থানা এলাকার হরিদাসকাটি গ্রামে সম্প্রতি এমনই ঘটনা ঘটেছে। সেখানে পিসির বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল ভাইঝি। পিসি নিজের মেয়ের পাশাপাশি ভাইঝিরও বিয়ে দিয়ে দেন। নিজের মেয়ের ক্ষেত্রে পাত্রও নাবালক। পাত্রের মা আবার কালীতলা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা। স্থানীয় সূত্রের খবর, দুই পাত্রীরই বয়স ১৩। অভিযোগ, প্রতিবেশীরা যাতে বাধা দিতে না পারেন বা পুলিশে খবর দিতে না পারেন, তার জন্য আগামী ২৫ মে বিয়ে হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন, লকডাউনের মধ্যেই চুপচাপ বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় দুই নাবালিকার। বিয়ের পরের দিন এক স্থানীয় বাসিন্দা ফোন করে হিঙ্গলগঞ্জ থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে মুচলেকা আদায় করেছে দুই পরিবারের থেকে।

Advertisement

আরও পড়ুন: পরিযায়ী রাজনীতিতে ঝুলছে শ্রমিকদের ভাগ্য

এই তালিকায় রয়েছে নিউ টাউনের বাসিন্দা এক নাবালিকাও। সূত্রের খবর, তাকে সন্দেশখালি হয়ে মিনাখায় নিয়ে গিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করেছিল পরিবার। তবে পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনে খবর আসার পরে সেই বিয়ে আটকানো গিয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে প্রগতি ময়দান থানা এলাকায় এক কিশোরী মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করার অভিযোগও। আবার মহেশতলার রবীন্দ্রনগর থানা এলাকার বছর ষোলোর এক কিশোরী সম্প্রতি থানায় গিয়ে নিজের বিয়ে রুখে দেয়।

তবে শুধু কলকাতা বা পার্শ্ববর্তী জেলা নয়, লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে একাধিক নাবালিকার বিয়ের খবর আসছে বিভিন্ন জেলার চাইল্ড লাইনে। অনেকে রাজ্যের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনেও সরাসরি ফোন করে অভিযোগ জানাচ্ছেন। কমিশন সূত্রের খবর, নাবালিকার বিয়ে বা বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করার প্রায় ১০০টি ঘটনা ইতিমধ্যেই নজরে এসেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিয়ে আটকানো গেলেও কিছু ক্ষেত্রে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে পুলিশ বা চাইল্ড লাইনে খবর পৌঁছয়।

বিভিন্ন জেলার চাইল্ড লাইন সূত্রের খবর, বেশির ভাগ মেয়ের বাড়ির লোকজন দাবি করেছেন, লকডাউনের সময়ে বিয়ে দিলে বেশি লোককে নিমন্ত্রণ করতে হবে না। খরচ বাঁচানোর জন্যই তারা এই কাজ করেছে বলে দাবি বেশির ভাগ পরিবারের।

আরও পড়ুন: কাজের বিনিময়ে খাবার জুটছে ফ্রান্সে আটক ১২ পড়ুয়ার

তবে এই বক্তব্য মানতে নারাজ কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “পুলিশ অন্য কাজে ব্যস্ত। পাড়া-প্রতিবেশীরাও ঘরে আটকে। ফলে পুলিশ বা চাইল্ড লাইনে কোনও ভাবে খবর গেলেও কেউ আটকাতে পারবে না, এমন মানসিকতা থেকেই এই সময়ে মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করছেন অনেকে। তবে এ নিয়ে সচেতনতা বাড়ায় কেউ না কেউ ঠিকই খবর দিয়ে দিচ্ছেন।’’

তবে এই সময়ে পালিয়ে বিয়ে করারও একাধিক ঘটনার কথা জানতে পেরেছে কমিশন। কমিশনের সদস্যা সুদেষ্ণা রায় বলেন, ‘‘লুকিয়ে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও চাইল্ড লাইনে বা কমিশনে ফোন আসায় অনেক বিয়েই আটকাতে পেরেছি।’’ তবে বহু প্রচার সত্ত্বেও কেন নাবালিকাদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা ঠেকানো যাচ্ছে না, উঠছে সেই প্রশ্ন।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement