মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
মঙ্গলবার স্পেনের উদ্দেশে রওনা হয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই দিনেই রাজ্য প্রশাসনে ব়ড়সড় ঝাঁকুনি। জেলার শীর্ষ আমলা থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসনেও বড়সড় পরিবর্তন ঘটানো হল। এই তালিকা প্রকাশের পর প্রশাসনিক মহলে আলোচনা, কোনও কোনও ক্ষেত্রে আধিকারিকদের উন্নীত করে পুরস্কৃত করা হয়েছে। কাউকে আবার কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি করা হয়েছে। এই রদবদলে একাধিক জেলার জেলাশাসক বদল করা হয়েছে। বদল করা হয়েছে জেলার পুলিশ সুপারও। মোট ২২ জন শীর্ষ আমলা-সহ ৩১ জন পুলিশ আধিকারিক বদলি হয়েছেন এই পর্যায়ে।
জলপাইগুড়ির জেলাশাসকের দায়িত্ব থেকে মৌমিতা গোদারা বসুকে স্বাস্থ্যসচিব করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর শুরু থেকেই মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতে রেখেছেন। তাই এই বদলিকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই তালিকায় পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক প্রিয়ঙ্কা সিংলাকে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের বিশেষ সচিব করা হয়েছে। নদিয়ার জেলাশাসকের দায়িত্বে থাকা শশাঙ্ক শেঠিকে করা হয়েছে পর্যটন দফতরের বিশেষ সচিব। আবার কোচবিহারের জেলাশাসক পবন কাদিয়ানকে অর্থ দফতরের বিশেষ সচিব করা হয়েছে। বাঁকুড়ার জেলাশাসক রাখিয়া আইয়ারকে কেপিআইটি নির্দেশক করা হয়েছে। স্ট্যাম্প বিভাগের রেজিস্ট্রার এবং কমিশনার হয়েছেন হরিশঙ্কর পনিকর। সুরেশকুমার জগৎ হয়েছেন বন দফতরের যুগ্মসচিব।
পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদকে পাঠানো হয়েছে নদিয়া জেলার জেলাশাসকের দায়িত্বে। এই জেলার জেলাশাসক ছিলেন শাশঙ্ক শেঠি। অরুণকে নদিয়া জেলার দায়িত্বে পাঠিয়ে পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসকের দায়িত্বে আনা হয়েছে পোন্নামবালম এস-কে। তিনি ছিলেন দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক ও জিটিএ-র দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক। তাঁর জায়গায় দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক হয়েছেন প্রীতি গয়াল। তিনি আবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসকের দায়িত্বে ছিলেন। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক প্রিয়ঙ্কা সিংলার বদলে জেলাশাসকের দায়িত্ব পেয়েছেন পূর্ণেন্দুকুমার মাঝি।
জলপাইগড়ি জেলার জেলাশাসক হিসেবে পাঠানো হচ্ছে শামা পারভিনকে। এত দিন জলাপাইগুড়ির জেলাশাসক ছিলেন মৌমিতা গোদারা বসু। হাওড়া জেলার জেলাশাসক মুক্তা আরিয়াকে পাঠানো হয়েছে পাশের জেলা হুগলিতে। বদলে হাওড়ার জেলাশাসক হয়েছেন দিপাপ প্রিয়া। তিনি ছিলেন হুগলির জেলাশাসক। বাঁকুড়ার জেলাশাসক হয়েছেন সিয়াদ এন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অতিরিক্তি জেলাশাসকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। রাধিকা আরিয়াকে সরিয়ে জেলাশাসক করা হয়েছে তাঁকে। পবন কাদিয়ানকে সরিয়ে কোচবিহারের জেলাশাসক হয়েছেন অরবিন্দকুমার মিনা। উত্তর দিনাজপুর জেলার জেলাশাসকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে কোচবিহারে আনা হয়েছে তাঁকে। আবার আলিপুরদুয়ার জেলার জেলাশাসক অরবিন্দ কুমার মিনাকে উত্তর দিনাজপুর জেলার জেলাশাসক করা হয়েছে। আর উত্তর দিনাজপুরে আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক করা হয়েছে আর বিমলাকে। কালিংম্পং জেলাশাসক ছিলেন তিনি। কালিংম্পংয়ের জেলাশাসক করা হয়েছে সুব্রহ্মণ্যম টি-কে। কালনার মহকুমা শাসক করা হয়েছে শুভম আগরবালকে। আশিস কুমার হয়েছেন বসিরহাটের মহকুমা শাসক। এ ছাড়াও আরও চার জন নতুন আধিকারিককে নিয়োগ করা হয়েছে রাজ্য প্রশাসনে।
অন্য দিকে রাজ্য পুলিশ প্রশাসনে পুলিশে মোট ৩১টি পদে রদবদল হয়েছে। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার অখিলেশ কুমার চর্তুবেদীকে করা হয়েছে জলপাইগুড়ি রেঞ্জের আইজি। বদলে জলপাইগুড়ি রেঞ্জের আইজি পদ থেকে সরিয়ে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার করা হয়েছে সি. সুধাকরকে। ডিআইজি বাঁকুড়া মুকেশকে ডিআইজি মুর্শিদাবাদ রেঞ্জ করা হয়েছে। বদলে মুর্শিদাবাদ রেঞ্জের ডিআইজি পদে থাকা রশিদ মুনির খানকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিআইজি (হেড কোয়ার্টার) করা হয়েছে। মিরাজ খালিদকে ডিআইজি পুরুলিয়া থেকে কলকাতা পুলিশে আনা হয়েছে। তিনি কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (এস্টাবলিশমেন্ট) পদে বদলি হয়েছেন। কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুমিত কুমারকে বারাসত রেঞ্চের ডিআইজি করা হয়েছে। দ্যুতিমান ভট্টাচার্যকে হাওড়া কমিশনারেটে ডিসি (হেড কোয়াটার) থেকে সরিয়ে কোচবিহারের পুলিশ সুপারের পদে পাঠানো হয়েছে।
রানাঘাটের পুলিশ সুপার কে কান্নানকে ব্যারাকপুরের অষ্টম ব্যাটেলিয়ানের এসএপি করা হয়েছে। রানাঘাটের পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পেয়েছেন কোচবিহার জেলার অতিরিক্তি পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা কুমার সানি রাজ। ডিসি ট্র্যাফিক কলকাতা সূর্যপ্রতাপ যাদবকে মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার করা হয়েছে। আনন্দ রায়কে আসানসোল দুর্গাপুর কমিশনারেট থেকে সরিয়ে পাঠানো হয়েছে জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার পদে। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথকে করা হয়েছে কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার হয়েছেন সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য। যিনি হুগলি জেলা (গ্রামীণ)-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন। আর কৃষ্ণনগর পুলিশ সুপার ঈশানী পালকে পাঠানো হয়েছে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি পদে। পঞ্চায়েত ভোটে ভাঙড়ে একাধিকর অশান্তির ঘটনা ঘটায় সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন বারুইপুরের পুলিশ সুপার পুষ্পা। এই রদবদলে তাঁকেও পাঠানো হয়েছে কলকাতা সশস্ত্র বাহিনীর দ্বিতীয় ব্যটেলিয়ানের দায়িত্বে। ডায়মন্ডহারবার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশচন্দ্র ঢালিকে করা হয়েছে বারুইপুর জেলা পুলিশের সুপার। হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি সেন্ট্রাল রাঘব সি-কে কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার করা হয়েছে। রানাঘাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রূপান্তর সেনগুপ্তকে করা হয়েছে ডায়মন্ডহারবার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
কামনাশিস সেনকে হুগলি জেলার গ্রামীণ জেলা পুলিশের সুপার করা হয়েছে। তিনি ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপার। আর পূর্ব বর্ধমানের দায়িত্বে গিয়েছেন অমনদীপ। দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার রাহুল দে-কে কলকাতা পুলিশের ডিসি পদে আনা হল। আর দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার হয়েছেন চিন্ময় মিত্তল, তিনি পুরুলিয়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন। ডিসি ট্রাফিক ওয়াই এস জগন্নাথরাও-কে ডিসি ট্রাফিক পদে উন্নীত করা হয়েছে। তিনি ছিলেন ডিসি ট্রাফিক (সাউথ)। মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপারের পর থেকে সরিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের আইবি করা হয়েছে সুরিন্দর সিংহকে। ভিদিত রাজ ভূদেশকে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি পদ থেকে সরিয়ে কলকাতা পুলিশের ডিসি করা হয়েছে। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার ভি জি সতীশ পশুমারথিকে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি করা হল।
হাওড়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলকানন্দা ভাওয়ালকে করা হয়েছে হাওড়া পুলিশ কমিশনাটেরে ডিসি সেন্ট্রাল। মাথাভাঙার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত বর্মা পেয়েছেন কলকাতা সশস্ত্র বাহিনীর ১ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের দায়িত্ব। পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেড কোয়াটার (কাঁথি) মানভ সিংলাকে ডিসি বিধাননগর করা হয়েছে। মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মালদহ অমিত কুমার সাউকে কলকাতা সশস্ত্র বাহিনীর চতুর্থ ব্যাটেলিয়ানের দায়িত্বে আনা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঐশ্বর্য সাগরকে ডিসি বিধাননগর করা হয়েছে।