তৃতীয় বার সরকার গঠনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে এ বার কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে উৎখাত করার ডাক দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপির প্রবল চেষ্টাকে ব্যর্থ করে তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের ‘অব কি বার, দোশো পার’-এর লক্ষ্য ভেঙে দিয়ে আবার বাংলার মসনদে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃতীয় বার সরকার গঠনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে এ বার কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে উৎখাত করার ডাক দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। আহ্বান জানালেন বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হতে।
মঙ্গলবার একটি ভিডিয়ো বার্তায় মমতা বলেন, ‘‘২০২১ সালে অনেক ঝড়ঝঞ্ঝা পেরিয়ে মা-মাটি-মানুষকে সরকার গঠন করবার দায়িত্ব দিয়েছেন বাংলার মানুষ। বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের অত্যাচারী শাসনের পর আমাদের সরকারের ১২ বছর হল। তাতে বাংলাকে আমরা অনেক এগিয়ে দিতে পেরেছি। সারা বিশ্বের দরবারে বাংলা বন্দিত হচ্ছে। বাংলা বিদ্যুৎশক্তিতে এগিয়ে গিয়েছে। শিল্পের পরিকাঠামোয় এগিয়েছে। পর্যটনে এগিয়েছে। অর্থনৈতিক সিস্টেমে পরিবর্তন এসেছে।’’ এর পর মমতার সংযোজন, ‘‘ তবে দুঃখ আমাদের একটাই।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম ৩৪ বছরের অত্যাচারী সরকার চলে যাওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে আমরা একটু সহানুভূতি পাব। আমাদের ন্যায্য টাকাপয়সা পাব। কিন্তু সহানুভূতি তো আমরা পাইইনি। উপরন্তু ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকাটাও দেয়নি কেন্দ্র। তবু তার মধ্যেও আমরা ১০ হাজার কোটি কর্মদিবস সৃষ্টি করেছি।’’
দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে তাঁর সরকারের আমলে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কথা তুলে ধরেছেন মমতা। জানান, ওই জনমোহিনী প্রকল্পের জন্য প্রভূত উপকার হয়েছে বাংলার মানুষের। তিনি জোর দেন ভ্রাতৃত্ববোধ এবং অখণ্ডতার উপর। অভিযোগের সুরে মমতা বলেন, ‘‘প্রচুর কাজ হওয়ার পরেও কুৎসা এবং অপপ্রচার করছে বিরোধীরা। তবে তার মধ্যেও বাংলা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।’’ এর পর সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মানুষকে ‘মন কি বাত’ বলার নামে ‘ঝুট কি বাত করতে হ্যায়।’’
ভোটমুখী কর্নাটকেও বিজেপি ‘ভুয়ো প্রতিশ্রুতি’ দিচ্ছে বলে কটাক্ষ করেন তৃণমূল নেত্রী। মমতার কথায়, ‘‘আমাদের লড়তে হচ্ছে মানি পাওয়ার, মাস্ল পাওয়ার, মাফিয়া পাওয়ার এবং একটি শোচনীয় সরকারের সঙ্গে। তার পরও আমরা মনে করি, বাংলা কোনও দিন হারেনি। বাংলা মাথা উঁচু করে থাকবে।’’
বাংলার মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘সবাইকে শুভনন্দন। আর দেশের জন্য একটা কথা বলতেই হবে— এই দেশে পরিবর্তন হওয়া খুব জরুরি। পরের ভোট হবে পরিবর্তনের নির্বাচন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘যদি ১২ বছরে আমরা এত কিছু করতে পারি একটা অত্যাচারী সরকারের বিরুদ্ধে লড়ার পরে, তা হলে ১০ বছরের একটি জুমলা সরকারের বিরুদ্ধেও লড়তে পারব। তাই সব বিরোধী দলকে বলব, আসুন একজোট হই। বিজেপিকে পরাস্ত করি। গণতন্ত্রে মানুষ শেষ কথা বলুক।’’
সরকারের দ্বিতীয় বর্ষের পূর্তিতে এক দিকে মানুষকে লড়াই করার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্য দিকে নাম না করে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিয়ে টুইট করেছেন। লেখেন, ‘‘২০২১ সালে আজকের দিনে বাংলার মা, মাটি, মানুষ সারা পৃথিবীকে দেখিয়েছিল যে, গণতন্ত্রে মানুষের শক্তির চেয়ে বড় কোন শক্তি নেই। আর সে জন্য আমি তাঁদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রকৃত জাতি নির্মাণে আমাদের প্রয়াস জারি রাখতে হবে, দায়বদ্ধতা বজায় রাখতে হবে। কারণ আগামী দিনে আমাদের অনেক যুদ্ধ লড়তে হবে, জিততেও হবে।’’
এই বর্ষপূর্তিকে কটাক্ষ করে টুইট করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি লেখেন, ‘‘২০২১ সালের ২ মে, যাঁরা অভূতপূর্ব ভোট পরবর্তী ভয়াবহ হিংসা এবং সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিলেন তাঁদের শ্রদ্ধা জানাই। সেই কালো দিনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি পালন করা হচ্ছে। এখন আঞ্চলিক দলে পরিণত হওয়া তৃণমূল কংগ্রেস সব রকম নৃশংসতা দেখিয়েছিল। বাংলার গণতন্ত্রের ইতিহাসে এটা অভিশপ্ত, কালো দিন। আমাদের কর্মীদের বলিদান কখনও ভুলব না। তাঁদের সঠিক বিচার দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। বাংলার বিজেপি কর্মীদের ওপর সেই অত্যাচারের কথা আমরা যেন ভুলে না যাই।’’