বিএসএফের কাজ নিয়ে ফের সরব মমতা। ফাইল চিত্র।
বিএসএফের কাজ ও এক্তিয়ার নিয়ে ফের তীব্র সমালোচনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। বুধবার নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে কোচবিহারের জেলা প্রশাসনিক কর্তাদের তিনি বলেন, “পঞ্চাশ কিলোমিটার পর্যন্ত ঢুকতে দেবে না বিএসএফকে, তোমাদের অনুমতি ছাড়া। কারণ, ওরা ঢুকেই গ্রামের লোককে গুলি করছে আর ও-পারে ফেলে দিয়ে আসছে। এ রকম অনেক ঘটনা আমাদের কাছে
এসেছে। কোচবিহারে পর পর ওই ঘটনাগুলি ঘটেছে।”
বিএসএফের গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তা বলেন, “এমন অভিযোগ ঠিক নয়। কোচবিহারে কী হয়েছে, তা সবাই জানেন।” কোচবিহার দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক তথা আলিপুরদুয়ার জেলার দলীয় পর্যবেক্ষক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, ‘‘বিএসএফের এক্তিয়ার পুলিশ ঠিক করে দিতে পারে না। তা ছাড়া, পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই বিএসএফ কাজ করছে।’’
কিছু দিন আগে কয়েকটি রাজ্যের ক্ষেত্রে বিএসএফের কাজের এক্তিয়ার বাড়িয়ে সীমান্ত থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটার করা হয়েছে। এই নিয়ে আগেও উত্তরবঙ্গ সফরে এসে প্রশাসনিক বৈঠকে ক্ষোভ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে গত বছর এপ্রিলে বিধানসভা ভোটের সময়ে শীতলখুচিতে আধাসেনার গুলিতে চার জন ভোটারের মৃত্যুর তদন্তেও রাজ্য সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সব কিছু নিয়েই এ দিন মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিনের ভিডিয়ো কনফারেন্সে কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুমিত কুমারকে মুখ্যমন্ত্রী নজরদারি বাড়ানোর কথা বলেন। কোচবিহারে এক দিকে অসম সীমানা, অন্য দিকে বাংলাদেশ সীমান্ত। দুই ক্ষেত্রেই পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলেন তিনি। তিনি জানান, বিএসএফ পঞ্চাশ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও কাজ করলে রাজ্য পুলিশকে জানিয়েই যেন করে। তিনি বলেন, ‘‘বিএসএফকে বল, ওঁরা যা অপারেশন করবেন, রাজ্য পুলিশকে জানিয়ে (কনফিডেন্সে নিয়ে) করবেন।” শীতলখুচি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শীতলখুচির মামলায় ওঁদের ডাকা হচ্ছে, কেউ আসছেন না।’’ তার পরেই উষ্মা প্রকাশ করে তিনি জানান, সিবিআই তলব করলে যেতে হয়, কিন্তু আধাসেনার গুলিতে কেউ মারা গেলে রাজ্য পুলিশ যদি ডাকে, তা হলে কেউ আসে না।
বৈঠকেই পুলিশ সুপার জানান, তিনি বিএসএফের কোচবিহার রেঞ্জের ডিআইজির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিএসএফের একটি নতুন ব্যাটেলিয়ন সীমান্তে মোতায়েন করায় সমস্যা বেড়েছিল। কিন্তু ডিআইজি-র সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন, সীমান্তে সমস্যা আর হবে না। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য পুলিশ সুপারের কথায় সন্তোষ প্রকাশ করেননি। তিনি বলেন, “আর হবে না বলে যে কত বার করবে! তোমরা যাকে বাংলাদেশি বলেছিল, ওই লোকটি (বিএসএফের গুলিতে নিহত) কোচবিহারের। তোমরা প্রথম রিপোর্ট দিয়েছিলে লোকটি বাংলাদেশের।’’ এই প্রসঙ্গে তিনি নিজে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন একটি ঘটনারও উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে আরও তৎপর হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “মাথাভাঙা, দিনহাটা, কোচবিহার— প্রত্যেকটি জায়গা স্পর্শকাতর। ভাল করে নজর রাখতে হবে।”