ছত্রধরদের যাবজ্জীবন

তৃণমূলের বশ্যতা না মানাতেই কি শাস্তি, প্রশ্ন জঙ্গলমহলে

মাঝে ছ’বছরের ব্যবধান। এরই মধ্যে আমূল পাল্টে গেল ছবিটা। ২০০৯ সালে ফেব্রুয়ারিতে লালগড়ের খাসজঙ্গলে যে ছত্রধর মাহাতোকে পাশে নিয়ে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গলমহলের আন্দোলনের প্রতি তাঁর সমর্থন জানিয়েছিলেন, সেই ছত্রধরকেই মঙ্গলবার যাবজ্জীবনের সাজা শোনাল মেদিনীপুর আদালত।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৫ ০৪:০৬
Share:

মাঝে ছ’বছরের ব্যবধান। এরই মধ্যে আমূল পাল্টে গেল ছবিটা। ২০০৯ সালে ফেব্রুয়ারিতে লালগড়ের খাসজঙ্গলে যে ছত্রধর মাহাতোকে পাশে নিয়ে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গলমহলের আন্দোলনের প্রতি তাঁর সমর্থন জানিয়েছিলেন, সেই ছত্রধরকেই মঙ্গলবার যাবজ্জীবনের সাজা শোনাল মেদিনীপুর আদালত।

Advertisement

ছত্রধর-মমতার যুগলবন্দির স্মৃতি এখনও টাটকা জঙ্গলমহলের মানুষের মনে। মমতা এখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনাচক্রে এ দিন বিকেলে আবার তিনি ঝাড়গ্রামেই এসেছেন।

ছত্রধরের এই সাজা প্রত্যাশিত বলেই মনে করছেন জঙ্গলমহলের রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। তাঁদের মতে, ছত্রধর তৃণমূলে নাম লেখাননি। তাঁর পরিবারও শাসক দলের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেনি। ফলে, এটা হওয়ারই ছিল। ঝাড়গ্রাম জেলা কংগ্রেসের মুখ্য সংগঠক সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূলের প্রতি আনুগত্য স্বীকার না করায় ছত্রধরকে চূড়ান্ত শাস্তিই তাঁকে পেতে হল।” সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ডহরেশ্বর সেন বলেন, “খুনে অভিযুক্ত মাওবাদীরা চাকরি পেয়ে সরকারি আশ্রয়ে সুরক্ষিত আছেন। আর তৃণমূলের প্রতি আনুগত্য না দেখানোয় ছত্রধরের এই পরিণতি।”

Advertisement

২০০৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ছত্রধরের জোরাজুরির কারণে নিরাপত্তা রক্ষী ছাড়া খাসজঙ্গলে গিয়েছিলেন মমতা। কারণ, তখন ছত্রধররা পুলিশকে বয়কট করছিলেন। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের বক্তব্য, তত্‌কালীন বিরোধী নেত্রী মমতা ছত্রধরের কথা মেনে নিয়েছিলেন, ছত্রধর কিন্তু মমতাকে নেত্রী হিসেবে কখনও স্বীকার করেননি। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের প্রাক মুহূর্তে বিধানসভা ভোটে দাঁড়ানোটাই ছত্রধরের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। শাসক দলের জেলাস্তরের এক প্রভাবশালী নেতার বক্তব্য, “গত বিধানসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম আসনে ছত্রধর জেল থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ছত্রধর হয়তো নিজের জনমত যাচাই করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ছত্রধরের এই হঠকারিতা নেত্রী ভাল চোখে নেননি।”

২০১১ সালে লোকসভা ভোটের পর দিন ছত্রধরের নির্দেশেই লালগড়ে জনগণের কমিটির ব্যানারে মিছিল বেরিয়েছিল। স্লোগান উঠেছিল, ‘এই সিপিএম দেখে যা, মমতার ক্ষমতা।’ ছত্রধরের আন্দোলনের এক সময়ের সঙ্গী শ্যামল মাহাতো, দিলীপ মাহাতো, লসো হেমব্রমরা জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে তৃণমূলে নাম লেখান। প্রত্যাশিত ভাবে তাঁরা শাসক দলের পদ পেয়ে এলাকায় দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করছেন। কমিটির প্রাক্তন নেতা-কর্মীদের একাংশ শাসক দলে নাম লিখিয়ে পঞ্চায়েত-প্রশাসনকেও নিয়ন্ত্রণ করছেন। অন্যদিকে, কমিটির প্রাক্তন মুখপাত্র অসিত মাহাতো, মনোজ মাহাতোরা জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে অল্প সময়ের জন্য শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হলেও পরে নিজেদের সক্রিয় রাজনীতিতে থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন। বীরকাঁড় চকে মনোহারি দোকান করেছেন মনোজ। কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা অসিত এখন চাষবাস করছেন।

ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) নেত্রী চুনিবালা হাঁসদা বলেন, “ছত্রধরের সাজা ঠিক না ভুল, সেই বিতর্কে যাব না। কিন্তু ছত্রধরের দোষটা কী? তিনি তো মানুষের জন্য আন্দোলন করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী তো এক সময় ছত্রধরের সঙ্গে সভাও করেছিলেন। আসলে মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে যাঁরা সাফাই গাইবেন, তাঁরা ধোয়া তুলসিপাতা। সেই জন্যই তো শত শত খুনের অভিযুক্তরা চাকরি পেয়ে নিশ্চিন্তে আছেন। আর ছত্রধরের জন্য বরাদ্দ জেলের কুঠুরি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement