ছত্রধর মাহাতো।—ফাইল চিত্র।
প্রকাশ্যে তিনি সময় চাইছেন। তৃণমূলের অন্দরে তিনি বলছেন, ‘দলে আছি, পদে নেই’। জনসাধারণের কমিটির প্রাক্তন নেতা ছত্রধর মাহাতো বাড়ি ফেরা পর থেকেই উঠছে প্রশ্ন, তিনি কি সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেবেন! তিনি কি তৃণমূলে যোগ দেবেন! তাঁর কথায় কি স্ববিরোধিতা দেখা যাচ্ছে না!
ছত্রধরের ঘনিষ্ঠ জানাচ্ছে, সম্মানজনক দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি তৃণমূলের ঝান্ডা ধরে পথে নামবেন। ছত্রধরের আইনজীবী কৌশিক সিংহ বলছেন, ‘‘সম্মানজনক পদ পেলে ছত্রধর অবশ্যই সক্রিয় ভাবে রাজনীতি করবেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলের শান্তি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে তিনি সরকারকে সহযোগিতা করছেন।’’ অন্যদিকে ছত্রধরকে নেতৃত্বে নিয়ে আসার ব্যাপারে জল মাপছে শাসকদল।
লালগড় আন্দোলনের প্রধান মুখ ছত্রধরের সাজার মেয়াদ কমিয়ে দিয়েছিল হাইকোর্ট। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে লালগড়ের আমলিয়া গ্রামে ফিরে ছত্রধর শাসকদলের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছিলেন। এবং বারে বারে জানিয়েছেন, তিনি আগের মতোই মানুষের পাশে রয়েছেন। তবে কয়েকদিন আগে গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকে তৃণমূলের একটি কর্মিসভায় যোগ দিয়েছিলেন ছত্রধর। নিজে পদে না থেকেও দলে রয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন। কেন এ ধরনের মন্তব্য? ছত্রধর বলেন, ‘‘তৃণমূলের রাজনীতিতে মানুষের কাজ করতে গেলে পদটাও প্রয়োজন। নেতৃত্ব যা সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই হবে।’’
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঝাড়গ্রাম জেলায় শাসকদলের রাজনীতিতে ছত্রধরকে সামনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অবশ্য জল মাপছে তৃণমূল। ছত্রধরও একাধিকবার ঝাড়গ্রামে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করলেও কৌশলগত কারণে তৃণমূলের সঙ্গে প্রকাশ্যে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছেন। তৃণমূলের একাংশ বলছে, জঙ্গলমহলের অশান্তিপর্বে ছত্রধর আদিবাসী-মূলবাসীদের দাবি সামনে রেখে বাম সরকারের পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। কিন্তু ওই পর্বে মাওবাদী নাশকতার নানা ঘটনায় তিনি অভিযুক্ত হন। ফলে, তাঁর গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করে নেতৃত্বে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সওয়াল করছেন তৃণমূলের একাংশ।
বিধানসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহলে আদিবাসী সামাজিক সংগঠেনর একাংশ পঞ্চম তফসিলের দাবিতে নতুন করে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। ছত্রধর নিজে কুড়মি সম্প্রদায়ভুক্ত। কুড়মিদের একাধিক সংগঠনও তাদের আদিবাসী তালিকাভুক্তির ও কুড়মালি ভাষা স্বীকৃতির দাবিতে ধরে আন্দোলন করছেন। জঙ্গলমহলের আদিবাসী ও কুড়মি সম্প্রদায়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিরবাহা সরেনের পাশাপাশি, কুড়মি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ছত্রধরকেও নেতৃত্বে আনার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছে তৃণমূল। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী বিরবাহা সরেন বলেন, ‘‘ছত্রধরবাবু দলে আছেন। দলীয় কর্মসূচিতেও যাচ্ছেন। তাঁকে দলীয় দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে রাজ্য নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবেন।’’