নিয়তি মাহাতো। ফাইল চিত্র
হাইকোর্ট সাজার মেয়াদ কমিয়ে দেওয়ায় তিনি মুক্ত হয়েছেন আগেই। জঙ্গলমহলে জনসাধারণের কমিটির সেই প্রাক্তন নেতা ছত্রধর মাহাতোর স্ত্রী নিয়তি মাহাতো এ বার পশ্চিমবঙ্গ সমাজকল্যাণ পর্ষদের সরকার মনোনীত সদস্য হলেন। এই মর্মে রাজ্য নারী, শিশুকল্যাণ ও সমাজকল্যাণ দফতরের যুগ্ম সচিবের ৬ মে স্বাক্ষরিত চিঠি গত মঙ্গলবার লালগড়ের আমলিয়া গ্রামে পৌঁছেছে। ব্লক অফিসের প্রতিনিধি মারফত চিঠিটি ছত্রধরের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়তি পর্ষদের সদস্য হওয়ায় এখন থেকে তিনি ঝাড়গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী জেলার নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ সংক্রান্ত কাজকর্ম নজরদারি করতে পারবেন। প্রয়োজনে দফতরের আধিকারিকদের বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ ও প্রস্তাব দিতে পারবেন। পশ্চিমবঙ্গ সমাজকল্যাণ পর্ষদের চেয়ারপার্সন সুরঞ্জনা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গত জানুয়ারিতে এক সদস্যের মৃত্যুর কারণে একটি পদ শূন্য হয়। ওই পদে নিয়তিদেবীকে কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ পর্ষদের অনুমোদনক্রমে মনোনীত করা হয়েছে।’’ সুরঞ্জনা জানান, জেলাস্তরে সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্তরা পর্ষদে আসায় নারী ও শিশুকল্যাণ ও সমাজকল্যাণের কাজকে আরও ভালভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী।
এমন পদক্ষেপে খুশি নিয়তি ও ছত্রধর। নিয়তি বলেন, ‘‘লকডাউনের মধ্যে এমন পদ-প্রাপ্তি আমার কাছে অপ্রত্যাশিত। এ বার সরকারি ভাবে মানুষের কাজ করতে পারব, এটা ভেবে ভাল লাগছে।’’ ছত্রধরের সংযোজন, ‘‘রাজ্য সরকারের তরফে নিয়তিকে এমন সুযোগ দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। নিয়তির কাজের পরিধি কতটুকু সেটা অবশ্য ওই চিঠি থেকে স্পষ্ট হচ্ছে না। লকডাউন কাটলে কলকাতায় পর্ষদের সদর কার্যালয়ে গিয়ে বিশদে নিয়তি জেনে আসবে।’’
কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ পর্ষদের অধীনে রয়েছে রাজ্য সমাজকল্যাণ পর্ষদ। পর্ষদের কার্যকালের মেয়াদ সর্বোচ্চ ছ’বছর। পর্ষদের মাধ্যমে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অনুদানে নারী, শিশু কল্যাণ ও সমাজকল্যাণের বিভিন্ন কার্যক্রম হয়।
লালগড় আন্দোলনের প্রধান মুখ ছত্রধর জেলমুক্ত হয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে গ্রামে ফিরেছেন। তারপর তৃণমূলের তরফে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হলেও ছত্রধর শাসকদলের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন। এবং বার বার জানাচ্ছেন, তিনি আগের মতোই মানুষের পাশে রয়েছেন। লকডাউনের আগে সাইকেলে গ্রামে-গ্রামে ঘুরে তাঁকে জনসংযোগ করতে দেখা গিয়েছিল। লকডাউন-পর্বে তৃণমূলের ত্রাণ বিলিতে অবশ্য তিনি ছিলেন না। বরং ব্যক্তিগত আইনজীবী কৌশিক সিংহকে নিয়ে জেলার বিভিন্ন জায়গায় বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ বিলি কর্মসূচিতে হাজির থেকেছেন ছত্রধর।
এই পরিস্থিতিতে নিয়তির পদপ্রাপ্তির অন্য তাৎপর্য রয়েছে বলেই রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের অনুমান। ছত্রধর ও নিয়তি তৃণমূলের সঙ্গে প্রকাশ্যে দূরত্ব বজায় রাখলেও গত কয়েক মাসে রাজ্য সরকারের শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রী ও আমলাদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করে বৈঠকও করেছেন মাহাতো দম্পতি। বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী সরাসরিই বলছেন, ‘‘জঙ্গলমহলে তৃণমূলের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতেই ছত্রধরকে রাজনৈতিক স্বার্থে মাঠে নামানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এর আগে ছত্রধরের দুই ছেলে চাকরি পেয়েছেন। এ বার স্ত্রীর সরকারি পদপ্রাপ্তি তারই ইঙ্গিত।’’ তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভানেত্রী বিরবাহা সরেনের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘সংশ্লিষ্ট দফতর নিয়তিদেবীকে যোগ্যতার ভিত্তিতে সদস্য মনোনীত করেছে। বিরোধীরা সবেতেই রাজনৈতিক অভিসন্ধি খোঁজে।’’ আর ছত্রধরের আইনজীবী কৌশিকের মতে, ‘‘নিয়তিও ছত্রধরের মতোই লড়াকু। তিনি সমাজকল্যাণ পর্ষদের সদস্য হওয়ায় ঝাড়গ্রাম জেলার অবহেলিত নারী ও শিশুরা উপকৃত হবে।’’