Shailesh Pandey

হাওড়া কাণ্ডে ৭৭ কোটির লেনদেন দু’টি অ্যাকাউন্টে

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিদিষ্ট দু’টি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হলেও তারপর তা সরিয়ে নেওয়া হত আরও তিনটি অ্যাকাউন্টে। এরপর সেই তিনটি অ্যাকাউন্ট থেকে আরও ন’টি অ্যাকাউন্টে টাকা লেনদেন করা হত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২২ ০৬:৫৪
Share:

উদ্ধার হওয়া টাকা। (ইনসেটে) শৈলেশ পাণ্ডে। নিজস্ব চিত্র

অনলাইনে বিদেশি মুদ্রার কেনাবেচা সংক্রান্ত পাঠ দেওয়ার পাশাপাশি আয়ের সুযোগের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন শৈলেশ পাণ্ডে। এক মাসে নিদিষ্ট দু’টি অ্যাকাউন্টে প্রায় ৭৭ কোটি টাকার লেনদেনও হয়েছিল। ভুয়ো নথি দিয়ে অন্যের নামে এই অ্যাকাউন্ট খুলে গোটা কারবার চালাচ্ছিলেন অভিযুক্তেরা। হাওড়ার শিবপুরে কোটি কোটি নগদ উদ্ধারের প্রাথমিক তদন্তে নেমে এমনই তথ্য হাতে পেয়েছে লালবাজার। যদিও ঘটনার পর থেকে হদিস মেলেনি অভিযুক্ত শৈলেশ পাণ্ডে এবং তাঁর দুই ভাইয়ের। অভিযুক্ত শৈলেশের নামে লুকআউট নোটিস জারি করার পাশাপাশি ধৃতদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।

Advertisement

হাওড়ায় এই টাকার পাহাড় উদ্ধারের পিছনে আদতে যে অনলাইন চিটফান্ড রয়েছে, সে বিষয়ে এক প্রকার নিশ্চিত তদন্তকারীরা। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, কয়েক হাজার প্রতারিতের অ্যাকাউন্ট থেকে নিদিষ্ট অঙ্কের টাকা ঢুকেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নরেন্দ্রপুর শাখার নিদিষ্ট দু’টি অ্যাকাউন্টে। তার বেশির ভাগই ছিল অনলাইনে।

লালবাজারের এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে। মূলত, ভিন্ রাজ্যের একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা আসার তথ্য মিলেছে। বিদেশি কোনও অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা এসেছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ কালো টাকা সাদা করার কোনও চক্র কাজ করেছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিদিষ্ট দু’টি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হলেও তারপর তা সরিয়ে নেওয়া হত আরও তিনটি অ্যাকাউন্টে। এরপর সেই তিনটি অ্যাকাউন্ট থেকে আরও ন’টি অ্যাকাউন্টে টাকা লেনদেন করা হত। ইতিমধ্যেই এই ন’টি অ্যাকাউন্টের মধ্যে দু’টি থেকে ২০ কোটি টাকার হদিস পেয়েছে পুলিশ। সেগুলি ‘ফ্রিজ’ করা হয়েছে বলে লালবাজার জানিয়েছে। অর্থাৎ আপাতত অ্যাকাউন্ট এবং নগদ মিলিয়ে ২৮ কোটি ১৫ লক্ষ টাকার হদিস মিলেছে। বাকি টাকা কোথায় গেল, তার খোঁজ চলছে। তদন্তে একাধিক কোম্পানিরও হদিস পাওয়া গিয়েছে। তবে কোম্পানিগুলি ভুয়ো বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত অনলাইনে বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচা, ক্রিপ্টোকারেন্সির পাঠ দেওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষকে ফোন করতেন অভিযুক্তেরা। নির্দিষ্ট সাইটে প্রথমে নিদিষ্ট অঙ্কের টাকা ‘ফি’ হিসেবে তাঁদের দেওয়ার কথা বলতেন অভিযুক্তেরা। এর পর অনলাইনে ক্লাসের পাশাপাশি দেওয়া হত কমিশনের ভিত্তিতে আয়ের সুযোগ। অনলাইন ক্লাসে অন্য কয়েক জনকে আনতে পারলে ‘কমিশন’ দেওয়ার কথা বলতেন অভিযুক্তেরা। বিশ্বাস অর্জন করতে কয়েক জনকে কমিশনের টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। যদিও এ সবের বৈধ লাইসেন্স ছিল না বলে লালবাজার জানিয়েছে।

লালবাজার সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, তদন্তে পুলিশ সক্রিয় হতেই গাড়ি ভর্তি টাকা নিয়ে পালানোর ছক ছিল শৈলেশের। শিবপুরের ফ্ল্যাট থেকে অভিযুক্তদের বার হওয়ার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ হাতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। একটি গাড়ি নিয়ে শৈলেশের ভাইকে বেরিয়ে যেতেও দেখা গিয়েছে। যদিও শৈলেশ হেঁটেই বেরিয়েছিলেন বলে লালবাজার সূত্রে খবর।

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের অগস্টে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নরেন্দ্রপুর শাখার এই দু’টি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। সেপ্টেম্বরে অ্যাকাউন্ট থেকে অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়টি প্রথমে নজরে আসে। ব্যাঙ্কের তরফে তদন্তে নেমে একাধিক অসঙ্গতি পেয়েই হেয়ার স্ট্রিট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। এরপরেই তদন্ত হাতে নেয় লালবাজারের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি তদন্ত শাখা। সামনে আসে শৈলেশ পাণ্ডের নাম। এরপর শনিবার রাতে হাওড়ার শিবপুরে তল্লাশি চালিয়ে ফ্ল্যাটের নীচে গ্যারাজে থাকা গাড়ির ভিতর থেকে নগদ প্রায় দুই কোটি টাকা উদ্ধার হয়। রবিবার মধ্যরাতে হাওড়ার অপ্রকাশ মুখার্জি লেনে শৈলেশের আরও একটি ফ্ল্যাট থেকে প্রায় পাঁচ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে লালবাজার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement