রাজ্যপালের টুইট আক্রমণের জবাব দিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। প্রতীকী ছবি
সাতসকালে রাজ্য অর্থ দফতরকে নিশানা করে টুইটারে আক্রমণ শানিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তার জবাবও দিয়েছেন রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। নিজের করা টুইটে রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের মা প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারই প্রেক্ষিতে চন্দ্রিমা পাল্টা কটাক্ষ করেছেন রাজ্যপালকে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়া সরকারের কাজ, রাজ্যপাল কি সেই উদ্যোগ বন্ধ করতে বলছেন?’’
শনিবার সকালে রাজ্যপাল একটি টুইট করেন। সেখানে তিনি জানান, চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বাজেট (ভোট অন অ্যাকাউন্ট) বক্তৃতায় ‘মা’ প্রকল্পের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা করে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জানিয়েছিলেন ১ এপ্রিল থেকে তা চালু হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফেব্রুয়ারির মধ্যপর্বেই তা চালু করে দেন বলে রাজ্যপালের দাবি। আগাম চালু করা ওই প্রকল্পে অসাংবিধানিক ভাবে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল বলেও তাঁর অভিযোগ। রাজ্য সরকারের কাছে প্রকল্পের খরচ সংক্রান্ত হিসেব এবং নথি তলব করেছেন তিনি। টুইটারে ধনখড় লেখেন,‘অসাংবিধানিক ভাবে মা প্রকল্পের তহবিল অর্থ স্থানান্তর নজরে আসায় রাজ্যপাল ২০২১-এর ৩১ মার্চ পর্যন্ত খরচের হিসাব চেয়েছেন অর্থসচিবের কাছে।’
এরই পাল্টায় চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘রাজ্যের মানুষ পাঁচ টাকার বিনিময়ে ডাল-ভাত-সবজি-ডিম খাবেন। তাতেও রাজ্যপালকে নজর দিতে হবে?’’ মা প্রকল্প তথা তাঁর অর্থ বরাদ্দ এবং নথি রাজভবনে তলব করা নিয়ে নিয়ে রাজ্যপালের প্রশ্নের জবাবে কটাক্ষ করেছেন চন্দ্রিমা। তিনি বলেন, ‘‘ফেব্রুয়ারি মাসে বাজেটে মা প্রকল্পের ঘোষণা হওয়ার পর পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে তার কাজ শুরু হয়েছে। রাজ্যে মোট ৪৮৫টি মা ক্যান্টিন শুরু হয়েছিল, এবং তা এখনও চলছে। রাজ্যপাল প্রশ্ন তুললেই তা বন্ধ করে দেওয়া হবে না। কারণ গরিব মানুষ পাঁচ টাকার বিনিময়ে খেতে পাচ্ছেন।’’ এর পরেই চন্দ্রিমা রাজ্যপালের ‘সদিচ্ছা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়াই তো সরকারের কাজ। আমরা সে কাজই করেছি। রাজ্যপাল কী এই উদ্যোগ বন্ধ করে দিতে বলছেন? ওঁর কেন গায়ে লাগছে!’’
অন্য দিকে, ওই একই টুইটে ফের বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন (বিজিবিএস) আয়োজন এবং তার সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ধনখড়। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘আর এক উদ্ঘাটন। বিজিবিএস রিপোর্ট কার্ড নিয়ে অমিত মিত্রের নীরবতা বুঝিয়ে দেয়, পুরো বিষয়টিই আড়াল করার জন্য করা হয়েছে।’ অমিতকে রাজ্যপালের আক্রমণ প্রসঙ্গে চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘অমিত মিত্র নিজের কাজের স্বচ্ছতা প্রমাণ করেছেন। এবং বিজিবিএস নিয়ে যা বলার তিনি জনসমক্ষেই বলেছেন। এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলা কী রাজ্যপালের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে?’’ চন্দ্রিমার আরও প্রশ্ন, ‘‘রাজ্যপাল যেন ভুলে না যান, তিনি একটি রাজ্যের রাজ্যপাল। কোনও রাজনৈতিক দলের পালক নন। তাই আমরা বলব, রাজ্যপাল নিজের এক্তিয়ারের মধ্যে থেকেই কাজ করুন।’’
রাজ্যপালের টুইট নিয়ে সরব হয়েছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘মা প্রকল্পে গরিব মানুষ অল্প পয়সায় পুষ্টিকর খাদ্য পাচ্ছেন। কিন্তু জনতার করের পয়সায় আপনি রাজভবনে যে টি-পার্টিগুলির আয়োজন করছেন, তার হিসাব দিচ্ছেন না কেন?’