কলকাতা হাই কোর্ট। ফাইল চিত্র।
কখনও অতিসক্রিয়তা তো কখনও নিষ্ক্রিয়তা। এই দুই বিপরীত প্রবণতার অভিযোগ যেন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার পুলিশের পিছু ছাড়ছে না! বাগুইআটির দুই কিশোর খুনের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশের বিরুদ্ধে সময়োচিত তৎপরতার অভাবের অভিযোগ উঠেছিল। তার পরে পরেই বিধাননগর কমিশনারেটের সিপি-কে বদলি করে দেওয়া হয়। এ বার বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার তদন্তে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠল চন্দননগর কমিশনারেটের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ওই কমিশনারেট নিম্ন আদালতের নির্দেশকেও কার্যত আমল দিচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে চন্দননগরের ক্ষেত্রে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন মামলাকারীরা। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার মামলার পাশাপাশি একটি জনস্বার্থ মামলাও দায়ের হয়েছে। কোর্ট সূত্রের খবর, ২৬ সেপ্টেম্বর জনস্বার্থ মামলার শুনানি হতে পারে।
কোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থায় প্রতারিত হয়ে বহু মানুষ চন্দনগর থানা এবং কমিশনারেটে অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু কোনও তদন্তই প্রত্যাশিত গতিতে এগোয়নি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার ক্ষেত্রে পুলিশের চূড়ান্ত গাফিলতি দেখা গিয়েছে বলেও হাই কোর্টে অভিযোগ জমা পড়েছে। ওই তদন্তের গতিপ্রকৃতি এবং তার সঙ্গে যুক্ত পুলিশকর্মীদের আচরণ নিয়ে আগেই কড়া মনোভাব ব্যক্ত করেছে চন্দননগর কোর্ট। যদিও চন্দননগর পুলিশ সূত্রের দাবি, এই সংক্রান্ত কোনও অভিযোগই ঠিক নয়।
এই নিষ্ক্রিয়তার ক্ষেত্রেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন চন্দননগর থানা এবং ওই থানার আইসি। অর্থ লগ্নি সংস্থার একটি প্রতারণার মামলায় এক অভিযোগকারিণী চন্দননগরের অতিরিক্ত বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম) ঈশিতা রায়ের কাছে জানিয়েছিলেন, চন্দননগর থানার আইসি তাঁকে শর্ত দেন, তিনি তদন্তে ব্যক্তিগত ভাবে নজরদারি করবেন, যদি অভিযোগকারিণী তাঁর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সেই অভিযোগ ও আবেদনের ভিত্তিতে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারক। পরবর্তী কালে অভিযোগকারিণী ফের কোর্টে জানান, বিভাগীয় তদন্তের নামে পুলিশের নিজস্ব অফিসের বদলে একটি আবাসনে ডেকে চন্দননগরের সহকারী কমিশনার (সদর) তাঁকে হুমকি দিয়ে বয়ানে সই করিয়ে নিয়েছেন। তাতেও রীতিমতো অসন্তুষ্ট হয়ে চন্দননগর কমিশনারেটের বিরুদ্ধে নির্দেশ দেন এসিজেএম।
এসিজেএমের নির্দেশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারকের এজলাসে আর্জি জানায় পুলিশ। সেই মামলায় বিচারক ও কোর্ট সম্পর্কে সরকারি কৌঁসুলি অপমানজনক মন্তব্য করায় আদালত অবমাননার রুল জারি করেন অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এত কিছুর পরেও নিম্ন আদালতকে বিশেষ আমল দেয়নি পুলিশ। এমনকি, কোর্ট সহকারী কমিশনার (সদর) মৌমিতা দাস ঘোষকে তলব করা সত্ত্বেও তিনি হাজিরা দেননি। তাঁর বিরুদ্ধে সমন জারি করে কোর্ট। সেই সমনও সময়ে কার্যকর হয়নি বলে সূত্রের খবর।
এই অবস্থায় হাই কোর্টের দিকেই তাকিয়ে আছেন মামলাকারীরা।