বায়ুদূষণ রোধে ব্যর্থ হওয়ায় গত ২৭ নভেম্বর রাজ্যকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। প্রতীকী ছবি: এপি।
পাঁচ কোটি টাকা জরিমানার চেক পাঠানো হয়েছে প্রায় এক মাস আগেই। কিন্তু সেই টাকা হাতে পেয়েছে কি না, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত রাজ্যকে কিছু জানায়নি কেন্দ্র। এমনকি, একাধিক বার যোগাযোগের পরেও এ নিয়ে রা কাড়েনি কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ! আজ, মঙ্গলবার রাজ্য পরিবেশ আদালতকে হলফনামা দিয়েই এ কথা জানাতে চলেছে রাজ্য।
প্রসঙ্গত, বায়ুদূষণ রোধে ব্যর্থ হওয়ায় গত ২৭ নভেম্বর রাজ্যকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। দু’সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় দূষণ পর্ষদের অ্যাকাউন্টে সে টাকা জমা দিতে বলা হয়েছিল। রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, সেই মতোই গত ১০ ডিসেম্বর রাজ্যের তরফে স্পিড পোস্ট করে চেক মারফত সে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তার দিন তিনেক পরে সে টাকা জমাও পড়ে যায়। কিন্তু এত দিনেও কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে সেই টাকার প্রাপ্তি স্বীকার করে কোনও কিছু আসেনি বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
এ নিয়ে গত ৩ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে ই-মেল করেছিল রাজ্য। কিন্তু তার পরেও সাড়া মেলেনি। প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, আজ, মঙ্গলবার জাতীয় পরিবেশ আদালতে ফের বায়ুদূষণ সংক্রান্ত মামলার শুনানি হওয়ার কথা। তার আগে টাকার প্রাপ্তি স্বীকার করে একটা ই-মেল পাঠালেই হত! কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছুই না হওয়ায় টাকা জমা দেওয়া সংক্রান্ত নথি হলফনামার সঙ্গে যুক্ত করে পরিবেশ আদালতে জমা দিতে চলেছে রাজ্য।
সোমবার কেন্দ্রীয় দূষণ পর্ষদের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তারা অবশ্য জরিমানার টাকা প্রাপ্তির কথা স্বীকার করছে। জানা গিয়েছে, গত মাসের ১৩ তারিখেই সে টাকা জমা পড়েছে। কিন্তু রাজ্যকে কেন এ নিয়ে কিছু জানানো হয়নি, সে প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় দূষণ পর্ষদের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘পুরো প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে একটু সময় লাগছে। সে কারণেই এখনও রাজ্যকে উত্তর দেওয়া হয়নি।’’
এর পাশাপাশি ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (নিরি) রিপোর্টও হলফনামার সঙ্গে যুক্ত করে এদিন আদালতে পেশ করতে চলেছে রাজ্য। ওই রিপোর্ট ইতিমধ্যেই শহরের বায়ুদূষণের বাস্তবিক চিত্র তুলে ধরেছে। নিরির প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, সমীক্ষার তথ্য সংগ্রহের প্রতিটি দিনেই বায়ুসূচকের মান স্বাভাবিক মাত্রার থেকে বেশি থেকেছে। শীতে তো বটেই, এমনকি গ্রীষ্মেও বায়ুসূচকের মান সহনশীল মাত্রার থেকে কয়েক গুণ বেশি ছিল। শ্যামবাজার, মিন্টো পার্ক, চেতলা, মৌলালি, ডানলপ-সহ শহরের সব গুরুত্বপূর্ণ মোড়ই ধুলো-ধোঁয়ায় দূষণপ্রবণ। রাজ্য দূষণ পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘রাস্তায় মুখ ঢেকে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু মুখ ঢাকলেই তো আর দূষণ আটকানো যায় না। বায়ুদূষণের চূড়ান্ত রিপোর্টটি আগামী মার্চের মধ্যে নিরির জমা দেওয়ার কথা।’’
শহরের দূষণ নিয়ে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘আমরা দূষণের আগ্নেয়গিরির উপরে বসে রয়েছি। শুধু জরিমানা করেই হবে না, জরিমানার টাকাও পরিবেশ উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করতে হবে।’’