এমন আকুতিতেই শিকার আটকেছিলেন পূরবী। ফাইল চিত্র
লালগড়ের জঙ্গলে সে দিন বাঘ ছিল। আস্ত এক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। ‘শিকার উৎসব’ আটকাতে তৎপর ছিলেন বন দফতরের কর্তা- কর্মীরা। না- হলে যে বাঘ মারা যাবে! মেদিনীপুরের এডিএফও পূরবী মাহাতো শিকার করতে আসা আদিবাসী লোকজনেদের হাতে-পায়ে ধরেছিলেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বাঘকে বাঁচানো যায়নি। তবে সেই চেষ্টার স্বীকৃতি পেলেন পূরবী। ‘ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো’- র তরফ থেকে পুরস্কৃত হলেন তিনি। বুধবার কলকাতার বনভবনে তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে।
বন্যপ্রাণ রক্ষায় সারা বছরের কাজের নিরিখেই এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে পূরবীকে। এই কাজের জন্য এদিন যাঁরা পুরস্কৃত হয়েছেন, তাঁদের অন্যতম মেদিনীপুরের এই এডিএফও। গত বছরের মার্চের ঘটনা। লালগড়ের জঙ্গলে সেদিন ছিল ‘শিকার উৎসব’। আদিবাসী সমাজের প্রথা ‘শিকার উৎসব’। বিভিন্ন তিথিতে সেই উৎসব পালিত হয়। শিকার করতে ভিড় করেছিলেন আদিবাসী মানুষজন। বন দফতরের কর্তা- কর্মীরা নিশ্চিত ছিলেন, সেই সময়ে লালগড়ের জঙ্গলেই বাঘ ছিল। জঙ্গলে যাতে কেউ শিকারে না- যান সেই জন্য প্রচারও করা হয়েছিল। মাইকিং প্রচার চলেছিল গ্রামে গ্রামে। অবশ্য এত প্রচার সত্ত্বেও গাড়িতে, পিকআপ ভ্যানে, বাসে করে দূরদূরান্ত থেকে আদিবাসী লোকজনেরা চলে আসেন জঙ্গলে। উপস্থিত বন দফতরের কর্তা- কর্মীরা শিকার করতে আসা সকলকে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু সেই অনুরোধে সাড়া না- দিয়ে জোর করে জঙ্গলে ঢুকতে গিয়েছিলেন অনেকে। উভয়পক্ষের মধ্যে এ নিয়ে বাদানুবাদ শুরু হয়েছিল। পরিস্থিতি দেখে শিকারি দলের নেতৃত্বে থাকা প্রবীণদের হাতে- পায়ে ধরে আবেদন- নিবেদন শুরু করেছিলেন পূরবী। সেদিন তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘বন্যপ্রাণীদের বাঁচার অধিকার রয়েছে। এ ভাবে জঙ্গলে ঢুকে শিকার করবেন না। ওদের বাঁচতে দিন।’’
পূরবীর আবেদনে সাড়া দিয়ে সেদিন অনেকেই ফিরে গিয়েছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, আদিবাসীদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠানো। সেই কাজে সফল হয়েছিলেন মেদিনীপুরের এই এডিএফও। যদিও শেষরক্ষা হয়নি। মার্চের এই ঘটনার ক’সপ্তাহ পরে গত এপ্রিলে চাঁদড়ার জঙ্গলে শিকার করতে আসা একদল আদিবাসী লোকের হাতেই ‘খুন’ হয়েছিল বাঘ।
বন দফতরের এক সূত্রে খবর, পূরবী সে সময় এই আবেদন করেছিলেন তখন বণ্যপ্রাণী হত্যা কমে গিয়েছিল প্রায় ৯৫ শতাংশ। শুধু লালগড়ের জঙ্গলই নয়, মেদিনীপুর, শালবনির অনেক জঙ্গলঘেরা গ্রামে ঘুরেই শিকারে না- যাওয়ার প্রচার চালিয়েছিলেন পূরবী।
বহু চেষ্টাতেও বাঘ বাঁচানো যায়নি। সে আফশোস যায়নি। তবে পূরবীর সেই আকুতিতে সাড়া পড়েছিল। এ দিন ‘ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো’- র তরফে এ দিন যেন সেই আকুতিরই স্বীকৃতি পেলেন পূরবী। পুরস্কারপ্রাপ্তির পরে তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘পুরস্কার পেয়ে ভাল লাগছে। আরও ভাল কাজ করতে চাই।’’