মালবাজারে সভাস্থলে যাওয়ার আগে, পূর্ব হায়হায়পাথারে বিএনপি প্রাথমিক স্কুলে শিশুদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সব্যসাচী ঘোষ
সিকিম বা ভুটান থেকে জল ছাড়ার কোনও তথ্য রাজ্য পায় না। একটি পড়শি রাজ্য, অন্যটি পড়শি দেশ। বিষয়টিকে ‘আন্তর্জাতিক স্তরের’ বলে চিহ্নিত করে মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির মালবাজারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “আমাদের এই যে জায়গাটা (মালবাজার) তার এক পাশে সিকিম, এক পাশে ভুটান, ওই দিকে নেপাল। সঙ্কোশের (নদী) জলও চলে আসে। এই ব্যাপারগুলি আন্তর্জাতিক স্তরের। কেন্দ্রীয় সরকারের স্তরে আমরা অনেক বার জানিয়েছি। মুখ্যসচিবকে বলব, আবার জানাতে।” প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, রাজ্যের এ ধরনের তথ্য পাওয়ার কথা কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে বা কেন্দ্র তথ্য সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ইঙ্গিতে বুঝিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারও মালবাজারের বিপর্যয়ের দায় এড়াতে পারে না।
দুর্গাপুজোয় দশমীর বিসর্জনের দিন মাল নদীতে হড়পা বানে মৃত্যু হয়েছিল আট জনের। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছিল, মালবাজারের উপর দিকে বুড়িখোলা এবং পাথরঝোরা গ্রামে হড়পা বানের চিহ্ন মিলেছে। তবে বানের জল কোথা থেকে এসেছে, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। সোমবার মালবাজারে পা রেখেই মমতা বলেছিলেন, তদন্ত চলছে। এ দিন মাল আদর্শ বিদ্যাভবনের সরকারি সভায় হড়পা বানে মৃতদের পরিজন-সহ আধিকারিক, জনপ্রতিনিধিদের সামনে ফের তিনি বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। যদি কেউ দোষী হন, নিশ্চয়ই শাস্তি পাবেন।” সভায় তাঁর দাবি, ‘‘সঙ্কোশ থেকে জল ছাড়লে আমাদের জানায় না। সিকিম জল ছাড়লে জানায় না। আমাদের জানানো উচিত। জানায় না কেন?”
জল নিয়ে রাজ্য-কেন্দ্র টানাপড়েন আগেও হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আগে এ রকম করে বন্যা করে লোক মেরে দিত। তার পরে, আমরা ডিভিসিতে ঝগড়া করে করে এগুলো আটকেছি। বলেছি, না জিজ্ঞেস করে এগুলো করবে না।” যদিও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়ের মন্তব্য, “কোথাও বাধা পেলে বা সুবিধা করতে না পারলেই, মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের দোষ দেখেন।” ছটপুজোর জন্যও জনতাকে সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বেশি জলে নেমে যাতে কেউ পুজো না করেন, পুলিশ-প্রশাসনকে তা নজরে রাখতে বলেছেন। বলেন, “ছটপুজোয় অনেকে কথা শুনতে চান না। আমি বলব, বেশি জলে নামবেন না। অল্প জলে নামুন।” তবে মাল নদীতে হড়পা বানের পরে, নদীতে নেমে ছটপুজো করা যাবে না বলে জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং জেলা প্রশাসন জানিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের পরে, নদীতে নামতে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে বিভ্রান্ত অনেকে। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক নজর রাখতে বলেছেন। তা-ই রাখা হবে।”
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী হড়পা বানে মৃতদের পরিবারের এক জন করে সদস্যের হাতে সরকারি চাকরির ‘অফার লেটার’ তুলে দেন। পরিবার পিছু এক জন কনস্টেবল বা গ্রুপ-সি মর্যাদার চাকরি পেতে পারেন বলে জানান। উদ্ধারকারীদের সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করেন। তাঁদের এক লক্ষ টাকা পুরস্কার ও সাহসিকতার প্রশংসাপত্র দেওয়া হয়। তবে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় এ দিন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কটাক্ষ, ‘‘এ রাজ্যে কেউ পড়াশোনা করে চাকরি পায় না। দুর্ঘটনায় অথবা মদ খেয়ে মারা গেলে, মুখ্যমন্ত্রী রাজনীতি করার জন্য বাড়িতে গিয়ে চাকরি দিয়ে আসছেন।’’