জিএসটি নিয়মকেই হাতিয়ার করে চলছে কোটি কোটি টাকার কর ফাঁকি। এমনই অভিযোগ উঠছে। প্রতীকী ছবি।
মোদী সরকার জিএসটি চালু করেছিল কর ফাঁকি রুখতে। আর সেই জিএসটি নিয়মকেই হাতিয়ার করে চলছে কোটি কোটি টাকার কর ফাঁকি। অভিযোগ উঠেছে, শুধু ফাঁকি নয়, ভুয়ো নথি তৈরি করে কয়েকটি কোম্পানি কমিশন হিসেবে কামাচ্ছে কোটি টাকা।
এরকমই একটি চক্রের হদিশ পেলেন কেন্দ্রীয় শুল্ক দফতরের গোয়েন্দারা। তাঁদের দাবি, এরকম একটি নয়, কয়েকশো কোম্পানি এভাবেই প্রতারণার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। পূ্র্ব ভারতে এই প্রথম জিএসটি নিয়ে জালিয়াতি চক্রের হদিশ পেলেন গোয়েন্দারা।
একজন পেশায় কলমিস্ত্রি স্বপন শাসমল, অন্যজন মলয় নাথ মার্বেল পাথর কাটেন। তাঁদের দু’জনকে দিয়েই ২০১৭ সালের জুলাই মাসে রাতারাতি গজিয়ে ওঠে লোহা কেনাবেচার একটি কোম্পানি।
রেজিস্ট্রেশন অব কোম্পানিজ-এ হুগলির ঠিকানা দিয়ে এই কোম্পানি নথিভুক্তও করা হয়। আর সেই কোম্পানিকে সামনে রেখেই চলছিল ভুয়ো জিএসটির ব্যবসা।
আরও পড়ুন: প্রভিডেন্ট ফান্ড জালিয়াতি, ইডির হানা ইপিএফও অফিসে
কেন্দ্রীয় শুল্ক দফতরের গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, গত কয়েকমাস ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন নানা মাপের লোহা কেনাবেচার কোম্পানি এই নাথ-শাসমল নামে কোম্পানির নথি পেশ করছিল। মূলত ইনপুট ট্যাক্সের নথি। এক শুল্ককর্তা ব্যাখ্যা করেন, জিএসটি-র নিয়ম অনুযায়ী কোনও কোম্পানি অন্য কোনও কোম্পানির কাছ থেকে কিছু কাঁচামাল কিনলে ক্রেতা কোম্পানি জিএসটি দিচ্ছে। সেই ক্রেতা কোম্পানি যখন ওই কাঁচামাল দিয়ে কোনও পণ্য বানিয়ে বাজারে বিক্রি করছে, তখন বিক্রেতা কাঁচামাল কেনার সময়কার দেওয়া জিএসটি-র নথি দেখিয়ে করে ছাড় পায়। এই পদ্ধতির নাম ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট।
আর এই প্রতারণা চক্রটি গজিয়ে উঠেছে এই ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিটকে কেন্দ্র করেই। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, একাধিক জায়গায় একই শাসমল-নাথ এন্টারপ্রাইজের নথি দেখে তাঁদের সন্দেহ হয়। তাঁরা ওই কোম্পানির দুই ডিরেক্টরকে জেরা শুরু করে। আর তখনই জানা যায় যে, এঁরা আদতে কলমিস্ত্রি এবং মার্বেল কাটার কাজ করেন। তাঁদের অল্প কিছু পয়সা দিয়ে ডিরেক্টর বানিয়ে রেখে দিয়েছে সুমন্ত দাস নামে এক ব্যক্তি।
এরপরই এই দু’জনের সাহায্যে গ্রেফতার করা হয় সুমন্তকে। তল্লাশিতে মেলে জিএসটির ভুয়ো ইনপুট ট্যাক্স ইনভয়েস। তদন্তকারীদের অভিযোগ, কোম্পানি তৈরি করে এরা জিএসটিতে নথিভুক্ত করেছিল লোহা বিক্রেতা হিসেবে। আর সেই ভুয়ো কাগজ বিভিন্ন কোম্পানিকে সরবরাহ করত সুমন্ত। সেই সব কোম্পানি ওই নথি দেখিয়ে কর ফাঁকি দিত আর বিনিময়ে সুমন্ত কোম্পানিগুলি থেকে ফাঁকি দেওয়া করের ২০ শতাংশ কমিশন পেত।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ২০১৭-র জুলাই মাসে এই কোম্পানি তৈরি করা হয়েছিল। এ বছর জানুয়ারি মাস পর্যন্ত জাল নথি তৈরি করেছিল এই ভুয়ো সংস্থা। ছ’মাসে ৪৩ কোটি টাকার কর ফাঁকি দেওয়ার নথি তৈরি করেছিল এই সংস্থা। ধৃতদের বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করা হলেবিচারক তাঁদের ১৪ দিনের শুল্ক দফতরের হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। এক শীর্ষ শুল্ককর্তার দাবি, এটা হিমশৈলের চূড়া মাত্র।