রাজ্য সিপিএম-কে দুষল কেন্দ্রীয় কমিটি। ফাইল চিত্র
সময় পাওয়া গিয়েছিল। সঙ্কেতও পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু দু’য়ের কোনওটাই কাজে লাগাতে পারেননি সিপিএম রাজ্য নেতারা। বিধানসভা নির্বাচনের পর্যালোচনা রিপোর্টে এমনটাই বলেছে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি।
বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলে বিপর্যয়ের ইঙ্গিত থাকলেও দু’বছর সময়ে ঘুরে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে পার্টি।
এই বিধানসভা নির্বাচনের ফলকে স্বাধীনতার পরে দলের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় বলে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে দলের প্রাপ্ত ভোট শতাংশ ছিল ১৯.৭৫ শতাংশ। ২০১৯ সালেই সেটা কমে ৬.২৮ শতাংশ হয়ে যায়। কিন্তু তার পরেও রাজ্য নেতৃত্ব সতর্ক না হওয়ায় ২০২১ সালে প্রাপ্ত ভোটের হার নেমে ৪.৭৩ শতাংশ হয়েছে। এর থেকেই স্পষ্ট যে ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দল যত কর্মসূচিই নিক না কেন পরিস্থিতি বদলায়নি, বরং খারাপ হয়েছে।
এর পাশাপাশি আব্বাস সিদ্দিকির দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) সঙ্গে জোট মানুষ ঠিক ভাবে নেয়নি বলেও মনে করছে সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটি। আইএসএফ মুসলিম সংগঠন হিসেবে পরিচিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। সরাসরি নাম না করা হলেও রাজ্য সিপিএমের অনেকেই মনে করছেন, আব্বাসের সঙ্গে জোট নিয়ে সবচেয়ে সক্রিয় হওয়া মহম্মদ সেলিমেরই সমালোচনা করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। এক রাজ্য নেতা বলেন, ‘‘জোট গড়ার সময় দলের মধ্যেই অনেক প্রতিরোধ এসেছিল। কর্মীরাও বিষয়টাকে ভাল ভাবে নেয়নি।’’
সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়ে তৈরি হওয়া স্লোগান ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’ বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে ব্যবহার করা ঠিক হয়নি বলেও উল্লেখ করেছে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি। প্রসঙ্গত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে কৃষির বদলে শিল্পকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ারও সমালোচনা করেছিল কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু তখন কার্যত নেই সমালোচনায় কানই দেননি অলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্তারা। এক বুদ্ধদেব নন, নিরুপম সেন, সূর্যকান্ত মিশ্ররাও শিল্পায়ন নীতিকে গুরুত্ব দিতে চান। বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরে ফের সেই সময়ের আলোচনা ফিরে এসেছে সিপিএম-এর অন্দরে।
মেরুকরণের রাজনীতিকে সিপিএম রাজ্য নেতৃত্ব সঠিক গুরুত্ব দেয়নি বলেও সমালোচনা করা হয়েছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, সঠিক ভাবে বিষয়টাকে তুলে ধরতে না পারাটা বড় ব্যর্থতা। সাচার কমিটির রিপোর্টে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, সমানাধিকার এবং সত্তার কথা বলা হয়েছে। বাংলায় শুধু নিরাপত্তার বিষয়টাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত দু’বছরে বাংলার বিজেপি যে ভাবে শক্তি বাড়িয়েছে সেটাও রাজ্য নেতারা নজরে রাখেননি বলে উল্লেখ রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্টে। একই সঙ্গে বলা হয়েছ, রাজ্য সংগঠন মনে মনে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়ার হিসেব রাখলেও তা কাটিয়ে উঠতে শাসক দল যে সক্রিয় সেটা মাথায় রাখেনি।