‘হাউডি মোদী’-র আসরে বিজয় চৌথাইওয়ালে।
নীলবাড়ির লড়াইয়ে বঙ্গ বিজেপি-র সৈনিক হচ্ছেন ‘হাউডি মোদী’ সামলানো দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক দফতরের প্রধান বিজয় চৌথাইওয়ালে। বাংলার ভোটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনাবাসী বাঙালিদের পাশে টানতে চায় বিজেপি। সেই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেবেন বিজয়, যিনি আমেরিকায় সফল ভাবে ‘হাউডি মোদী’ সংগঠিত করেছিলেন। তবে রাজ্য বিজেপি-র দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, আপাতত কলকাতায় আসার কোনও কর্মসূচি নেই বিজয়ের। অনলাইনেই তিনি দেখভাল করবেন বঙ্গ বিজেপি-র ‘এনআরআই ফর সোনার বাংলা’ কর্মসূচি।
গঙ্গাপাড়ের নীলবাড়ির দখল চাই। তা নিশ্চিত করতে কোনও ফাঁক রাখতে চান না নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটি। সংগঠন সামলাতে একের পর এক কেন্দ্রীয় নেতাকে বাংলায় পাঠানো হয়েছে। এ বার বঙ্গভোটেরে দায়িত্বের একটা অংশ সামলাতে দেওয়া হল মোদী-শাহর বিশেষ আস্থাভাজন বিজয়কেও। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে অনাবাসী ভারতীয়দের প্রভাব কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছিল বিজেপি। এর পর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও মোদীর ‘প্রত্যাবর্তন’ নিশ্চিত করতে অনাবাসী প্রভাব কাজে লাগায় পদ্মশিবির। এ বার সেই পদ্ধতি নেওয়া হচ্ছে ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনেও। যোগাযোগ করা হবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অনাবাসী বাঙালিদের সঙ্গে। এর জন্য রাজ্যে আলাদা কমিটি তৈরি করা হলেও কেন্দ্রীয় ভাবে বিষয়টা দেখবেন ‘হাউডি মোদী’র প্রধান কারিগর বিজয়।বঙ্গ বিজেপির পক্ষে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলবেন দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন ফুটবলার কল্যাণ চৌবে।
মোদীর বিদেশনীতি নিয়ে বইও সম্পাদনা করেছেন বিজয়।
কে বিজয় চৌথাইওয়ালে?
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলেবেলা থেকে সঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত বিজয় পুণে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। এর পরে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সংস্থায় চাকরির পর ২০১৪ সালে বিজেপি-তে যোগ দেন। কিছুদিনের মধ্যেই নজরে পড়ে যান মোদী-শাহর। দু’জনের কাছেই ‘আস্থাভাজন’ বিজয়ের উপরে দায়িত্ব পড়ে বিদেশের মাটিতে মোদীর সফরের সময়ে অনাবাসী ভারতীয়দের একত্রিত করা। ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর আমেরিকার হিউস্টনে ‘হাউডি মোদী’ সমাবেশে জমায়েতের দায়িত্বে ছিলেন বিজয়। দাবি করা হয়েছিল, ওই সমাবেশে এসেছিলেন ৫০ হাজার মানুষ। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীর সেই সমাবেশে পরেই প্রথমবার খবরে আসেন বিজয়। তবে তার আগেও মোদীর থেকে নম্বর পেয়েছেন তিনি। কিন্তু তখন কাজ করতেন আড়াল থেকে। ২০১৫ সালের নভেম্বরে সিঙ্গাপুরে, ২০১৬ সালের জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানসবার্গে কিংবা কেনিয়ার নাইরোবিতে মোদীর সভায় অনাবাসী ভারতীয়দের জড়ো করার কাজ করেছিলেন বিজয়ই। সেই বছরেই বেলজিয়ামের ব্রুসেলসে মোদীর ‘স্ট্রংগার টুগেদার’ অনুষ্ঠানেও একই দায়িত্ব ছিল বিজয়ের কাঁধে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে মোদীর মায়ানমার সফরে, ২০১৮ সালে ওমানের মাসকট ও লন্ডনে সেখানকার ভারতীয়দের মোদীর সমাবেশে একত্রিত করেছিলেন বিজয়। অনেকে বলেন, অনাবাসীদের মধ্যে মোদী এবং বিজেপির জনপ্রিয়তা তৈরির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রয়েছে তাঁর। কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপ বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-র মতো ইস্যুতে বিজেপির পক্ষে আন্তর্জাতিক ভারতীয়দের মতামত গঠনের কাজও তিনিই সামলান।
২০১৪ সালে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পরে পরেই নজরে পড়ে যান মোদী-শাহর।
দলের অন্দরে ‘বিজেপির অ্যাম্বাসেডর’ নামে পরিচিত বিজয় আরও দু’জনের সঙ্গে মোদীর বিদেশনীতি নিয়ে ‘দ্য মোদী ডকট্রিন : নিউ প্যারাডাইম ইন ইন্ডিয়াজ ফরেন পলিসি’ নামে একটি বই সম্পাদনা করেছেন। সেই বিজয় এ বার দূর থেকে হলেও বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে মোদী-শাহর সৈনিক হিসেবে কাজ করবেন। বিজেপি সূত্রে খবর, বিভিন্ন দেশের বাঙালি সংগঠনগুলির সঙ্গে যোগাযোগের কাজে বড় ভূমিকা থাকবে তাঁর। লক্ষ্য, বিশ্ব-বাঙালিদের বিজেপির হয়ে ভার্চুয়াল প্রচারে সামিল করা এবং রাজ্যের কমিটিকে ওই বিষয়ে প্রত্যক্ষ ভাবে সাহায্য করা।
আরও পড়ুন: নীলবাড়ির লক্ষ্যে বিশ্ব-বাঙালিকেও দলে টানতে নয়া কৌশল বিজেপির