প্রতীকী ছবি।
পশ্চিমবঙ্গে একশো দিনের কাজ প্রকল্পের অগ্রগতি বরাবরই তারিফ কুড়িয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে দেখা যাচ্ছে, রাজ্য সরকার প্রথম পাঁচ মাসের মধ্যেই এই প্রকল্পে লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে যাওয়ার দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে। এবং এই গতি অব্যাহত থাকলে এই অর্থবর্ষের শেষে রাজ্য মূল লক্ষ্যমাত্রার কয়েক গুণ বেশি কর্মদিবস তৈরি করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। টাকা পাওয়া যাবে কি না, সেই বিষয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রশাসনের অন্দরে দুশ্চিন্তা থাকলেও কেন্দ্রীয় সরকারের ‘উদার’ অবস্থান অনেকটাই স্বস্তি দিয়েছে রাজ্যকে।
যদিও পর্যবেক্ষক শিবিরের ধারণা, আগামী বছর বাংলায় বিধানসভা ভোট। তার আগে এ বছর কেন্দ্র-রাজ্য উভয় পক্ষকে ‘উদার’ হতেই হত!
পঞ্চায়েত দফতর সূত্রের খবর, এ বছর ২২ কোটি কর্মদিবস তৈরির লক্ষ্য রয়েছে রাজ্যের সামনে। তার জন্য কেন্দ্র দিয়েছিল ৩৮০০ কোটি টাকা। লকডাউন পর্বে, গত এপ্রিলে প্রায় এক কোটি ২৪ লক্ষ কর্মদিবস তৈরি করেছিল রাজ্য। পরের মাসেই সেটা বেড়ে ছয় কোটিতে পৌঁছে যায়। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই ২০.১২ কোটি কর্মদিবস তৈরি হয়েছে বঙ্গে। তাতে কাজ পেয়েছেন ৮৪.৪৬ লক্ষ মানুষ। ২০১৮ সালের (১৩.০২ কোটি) তুলনায় এ বছর কর্মদিবস দু’গুণের কাছাকাছি বেড়েছে। ২০১৯ সালের তুলনায় (৬.১২ কোটি) এ বছরের বৃদ্ধি তিন গুণেরও বেশি। স্বাভাবিক ভাবেই চলতি আর্থিক বছর শেষের আগে লক্ষ্যমাত্রার থেকে বহু গুণ বেড়ে যাবে কর্মদিবসের সংখ্যা। তখন অতিরিক্ত কয়েক হাজার কোটি টাকার দরকার হবে। বস্তুত, লকডাউন পর্বে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চাপান-উতোর এবং রাজনৈতিক তরজার মধ্যে তাঁদের কর্মসংস্থানের বিষয়টিকে বাড়তি গুরুত্ব দিতেই হয়েছিল রাজ্য সরকারকে। তাতেই বেড়ে যায় কর্মদিবসের সংখ্যা।
কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে অসুবিধা হবে না। অনেক বেশি কর্মদিবস আমরা বিনা ঝঞ্ঝাটে তৈরি করতে পারব।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়
পঞ্চায়েতমন্ত্রী
দেশের আর্থিক পরিস্থিতির করুণ দশার মধ্যে কেন্দ্র যেখানে গরিব কল্যাণ প্রকল্পে ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচ করবে বলে জানিয়েছে, সেখানে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বাড়তি কর্মদিবসের জন্য রাজ্য অতিরিক্ত টাকা পাবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল প্রশাসনের অন্দরে। তবে পঞ্চায়েত দফতরের কর্তারা এখন জানাচ্ছেন, আগামী দিনে কেন্দ্রের কাছ থেকে আরও কয়েক হাজার কোটি টাকা মিলবে, এমন নিশ্চয়তা পাওয়া গিয়েছে।
পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, এই প্রকল্পে টাকা আর কোনও সমস্যা নয়। লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে গেলে আগে টাকা দিতে কিছুটা কিন্তু-কিন্তু করত কেন্দ্র। তবে তারা এখন প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা ছাড়ছে। ‘‘তাই কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে অসুবিধা হবে না। লকডাউনে বহু মানুষের জন্য কাজের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। এখনও করতে হবে। তাই এখন আর লক্ষ্যমাত্রা বলে কিছু নেই। তার থেকে অনেক বেশি কর্মদিবস আমরা বিনা ঝঞ্ঝাটে তৈরি করতে পারব,’’ বললেন সুব্রতবাবু।