ফাইল চিত্র।
১৪২৮ সালের সূচনায় বাংলা ভাষার মর্যাদার নিশান ঊর্ধ্বে তুলে ধরছে এনআইটি দুর্গাপুর। নিজেদের বিভিন্ন বিভাগের কাজকর্মে হিন্দি ও ইংরেজির সঙ্গে এ বার বাংলার ব্যবহার চালু করে দিয়েছে তারা। সম্পূর্ণ ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিন্দি, ইংরেজি ও বাংলা— তিন ভাষাতেই বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানালেন সেখানকার অধিকর্তা অনুপম বসু।
‘‘আমরা, বাঙালিরা একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করি। পয়লা বৈশাখ পালন করি। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে বাংলাকে ব্যবহারিক ভাষা হিসেবে প্রয়োগের চেষ্টা করি না,’’ আক্ষেপ অনুপমবাবুর। শুধু কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, রাজ্যের সাহায্যপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়েও বাংলায় দৈনন্দিন কাজকর্মের উদ্যোগ এখনও পর্যন্ত যৎসামান্য। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েই এনআইটি দুর্গাপুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, হিন্দি ও ইংরেজির পাশাপাশি বিভিন্ন বিভাগীয় কাজকর্মে বাংলা ব্যবহার করা হবে। তার সূচনা হয়েছে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে। অনুপমবাবু জানান, এর পরে ধীরে ধীরে তাঁর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব ক্ষেত্রেই এই ত্রিভাষা নীতি প্রয়োগের উদ্যোগ চলবে। এনআইটি দুর্গাপুরের কর্মী-আধিকারিকদের ৯৫ শতাংশই বাঙালি। পড়ুয়াদের মধ্যে বাঙালি ৫০ শতাংশ। পড়ুয়াদের দৈনন্দিন কাজকর্মে ত্রিভাষা নীতি চালু করা হবে কি না, সেই বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে অধিকর্তা জানাচ্ছেন, ধীরে ধীরে সেই বিষয়েও উদ্যোগী হবেন তাঁরা। ‘‘আমরা হিন্দি বা ইংরেজিকে অবহেলা করছি না। বাংলাকেও করব না। বাংলায় বসে বাংলাকে অবহেলা করা যায় না। এটাকে আমরা ঠিক কাজ বলে মনে করি না,’’ বললেন অনুপমবাবু। একই সঙ্গে তিনি জানান, বাংলা চালু করলে অনেক সময় এই ধরনের কাজের জন্য উপযুক্ত বাংলা শব্দ খুঁজে পাওয়া যায় না। সে-দিকেও দৃষ্টি দেওয়া জরুরি।
কিছু দিন আগেই পশ্চিমবঙ্গের আর এক কেন্দ্রীয় সংস্থা ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্সের কর্তৃপক্ষ তাঁদের প্রতিষ্ঠানের কাজকর্মে হিন্দি ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ জারি করেছিলেন। আট দফা নির্দেশে বলা হয়েছিল, ৫৫ শতাংশ চিঠিপত্র হিন্দিতে লিখতে হবে। হিন্দিতে লেখা চিঠির জবাব দিতে হবে হিন্দিতেই। ফাইলে ৩৩ শতাংশ নোট হিন্দিতেই দিতে হবে। ফাইলের নাম লিখতে হবে হিন্দি ও ইংরেজিতে। প্রথমে হিন্দিতে, পরে ইংরেজিতে লিখতে হবে। যত দূর সম্ভব হিন্দিতে লিখতে হবে সার্ভিস বুকও। প্রয়োজনে ফাইলে স্বাক্ষরও করতে হবে হিন্দিতে। এই ধরনের আরও কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তার জেরে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে অবশ্য সেই নির্দেশ তুলে নেওয়া হয়েছে। নতুন নির্দেশে বলা হয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের (ডিএসটি) পাঠানো চিঠি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানে ‘সরকারি ভাষা’ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু খামতি রয়েছে। প্রয়োজনে এই ব্যাপারে ওই প্রতিষ্ঠানের
হিন্দি অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
এই আবহে এনআইটি দুর্গাপুরের মতো কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি কাজকর্মে বাংলা ভাষা চালু করার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে শিক্ষা শিবিরের একাংশ।