সারদা থেকে রোজ ভ্যালি-সহ বিভিন্ন বড় লগ্নি সংস্থার আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে মামলা তো আছেই। সেই সঙ্গে সারা রাজ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার ৩৭টি মামলা। কোনওটা দিনহাটায়, কোনওটা বা ব্যারাকপুরে। একটা রায়গঞ্জে তো একটা বারুইপুরে।
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দৌড়ঝাঁপ করে এই সব মামলা লড়তে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সিবিআই-কে। এই অবস্থায় কলকাতায় সল্টলেকের কাছে লগ্নি সংস্থার মামলাগুলির জন্য আলাদা একটি আদালত চায় ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। সিবিআইয়ের তরফে সম্প্রতি রাজ্য সরকার এবং কলকাতা হাইকোর্টের কাছে এই মর্মে আবেদন জানানো হয়েছে।
কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতে সিবিআইয়ের একটি বিশেষ আদালত রয়েছে। কিন্তু সেখানে শুধু সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার দায়ের করা মামলাই শোনা হয়। রায়গঞ্জ বা কোচবিহারের মতো রাজ্যের নানা প্রান্তে সিবিআই দুর্নীতি সংক্রান্ত কোনও মামলা করলে তার শুনানি হওয়ার কথা কলকাতায় সিবিআইয়ের ওই বিশেষ আদালতে। কিন্তু সিবিআইয়ের আরও তিনটি শাখা রয়েছে— স্পেশ্যাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ, ইকনমিক অফেন্স উইং এবং ব্যাঙ্ক সিকিওরিটি অ্যান্ড ফ্রড সেল। এই তিন শাখার মামলাগুলির জন্য নির্দিষ্ট কোনও আদালত নেই। যে-এলাকায় মামলা রুজু হচ্ছে, সেখানকার সংশ্লিষ্ট আদালতে তার শুনানি হচ্ছে। এ রাজ্যে ওই তিন শাখার মোট মামলার সংখ্যা তত বেশি নয়। কিন্তু ইদানীং লগ্নি সংস্থা সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা বাড়ছে। সিবিআইয়ের স্পেশ্যাল ক্রাইম ব্রাঞ্চই তার তদন্ত করছে। সিবিআই-কর্তাদের বক্তব্য, লগ্নি সংস্থার অনিয়ম সংক্রান্ত মামলার বিচারের জন্য আলাদা আদালত গড়লে সুবিধা হবে তদন্তের।
২০১৪ সালের ৯ মে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশার মোট ৪৪টি লগ্নি সংস্থার মামলা হাতে নেয় সিবিআই। তখন প্রধান ছিল সারদা। পরে রোজ ভ্যালি নিয়েও হইচই হয় বিস্তর। সিবিআই জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ-ওডিশা পুলিশের হাত থেকে অসংখ্য মামলা নিয়ে তারা সব মিলিয়ে ১০০টি মামলা চালাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে সেই মামলার সংখ্যা ওডিশার তুলনায় কম। সিবিআইয়ের এক কর্তা জানান, সিবিআই তদন্তে নামায় এবং একে একে রাঘববোয়ালেরা গ্রেফতার হওয়ায় অনেকেই সাহস করে নতুন নতুন অভিযোগ আনছেন। সারদা, রোজ ভ্যালি ছাড়াও এমপিএস, আইকোর, আসদা, অ্যানেক্স, র্যামেল, রয়্যাল ইন্টারন্যাশনালের মতো অনেক লগ্নি সংস্থার নামেই বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জমা পড়ছে। আর এই ধরনের অভিযোগ পেলে মামলা করতে হচ্ছে সিবিআই-কেই। আপাতত কলকাতা ছাড়া লগ্নি সংস্থা সংক্রান্ত ৩৭টি মামলা ছড়িয়ে রয়েছে কোচবিহার, কৃষ্ণনগর, রায়গঞ্জ, বারাসত, আলিপুর, ব্যারাকপুর, বিধাননগর ও বারুইপুর আদালতে। ওই সব মামলার শুনানি যাতে একটি আদালতে করা যেতে পারে, সেই আবেদনই জানিয়েছে সিবিআই।
ওই কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রের খবর, ওডিশায় সমান্তরাল ভাবে নয়ছয়ের তদন্ত চলছে। সেখানে সিবিআইয়ের চারটি শাখার সব মামলারই শুনানি হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট বিশেষ আদালতে।