—ফাইল চিত্র
গরু পাচারে অভিযুক্ত, যুব তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক বিনয় মিশ্রের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করল সিবিআই। দাবি, কলকাতায় বিনয়ের তিনটি ঠিকানায় তল্লাশি চালালেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। গোয়েন্দাদের দাবি, গরু-কয়লা পাচার রোধে তৎপরতা
শুরু হতেই তিনি কলকাতা ছেড়েছেন। সিবিআইয়ের একটি সূত্রের দাবি, সেপ্টেম্বরে দুবাই পালিয়েছেন বিনয়। তার পর থেকে আর কলকাতা ফেরেননি। ঘটনাচক্রে, এনামুল হকের বিরুদ্ধে গরু পাচারের মামলাও দায়ের হয়েছে সেপ্টেম্বরেই।
বিনয় মিশ্রের বাড়িতে সিবিআই হানার প্রসঙ্গ টেনে শুক্রবার নন্দীগ্রামে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘ভাইপোর উদ্দেশে বলি, সিবিআই কাছাকাছি চলে গিয়েছে। আর একটা চৌকাঠ পেরোলেই তোলাবাজের বাড়ি।’’
প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় পাল্টা বলেন, ‘‘শুভেন্দু দেখছি সিবিআইয়ের মুখপাত্র হয়ে গিয়েছেন। কোনও প্রমাণ ছাড়া যে ভাবে উনি অভিষেকের বিরুদ্ধে আঙুল তুলছেন তা অসভ্যতা।’’
সিবিআইয়ের দাবি, গত ফেব্রুয়ারি থেকেই বার বার দুবাই যাচ্ছিলেন বিনয়। শেষ বার ফিরে আসেন ৯ সেপ্টেম্বর। এর পর ১৬ সেপ্টেম্বর এমিরেটসের বিমানে তিনি দুবাই চলে যান। ‘সরকারি ভাবে’ এখনও ভারতে ফেরেননি তিনি। তবে অভিবাসন দফতর এড়িয়ে তিনি কোনও পথে ভারতে ঢুকেছেন কি না, তাও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
কেন লকডাউনের মধ্যেও বার বার দুবাই যাচ্ছিলেন বিনয়? সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের দাবি, পাঁচ কোটি ডলার খরচ করে দুবাইয়ে রিসর্ট কেনার কথাবার্তা চালাচ্ছিলেন তিনি। সেই রিসর্ট নিজের জন্য না কি কোনও ‘প্রভাবশালীর’ জন্য, তা খতিয়ে দেখছে সিবিআই। কারণ, বিনয় যে ‘প্রভাবশালীর’ হয়ে এই ‘ডিল’ করতে বার বার দুবাই যাচ্ছিলেন, তিনিও জুলাই-অগস্ট-সেপ্টেম্বরে বেশ কয়েক বার দুবাই, সিঙ্গাপুর, ব্যাঙ্কক যাতায়াত করেছেন। এক বার তো সপরিবারও গিয়েছিলেন।
সিবিআইয়ের দাবি, বিনয়ের সঙ্গে হাওয়ালার কারবারে যুক্ত এক ব্যক্তিও কয়েক বার দুবাই গিয়েছেন। ওই ব্যক্তি শেষ বার ২৩ সেপ্টেম্বর দুবাই গিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর ফিরে এসেছেন বলে তদন্তকারীরা দাবি করেছেন। তাঁর উপরেও নজর রাখা হচ্ছে বলে সিবিআই জানিয়েছে। বিনয়ের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বিস্ফোরক কিছু পাওয়া গিয়েছে, এমন দাবি করছেন না তদন্তকারীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, রসদ সংগ্রহ আগেই হয়ে গিয়েছে। সিবিআই গত তিন বছর ধরে গরু ও কয়লা পাচারের নথি সংগ্রহ করেছে। রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ, প্রশাসনিক কর্তা, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের একাংশ এবং হাওয়ালা কারবারিদের যে যোগসূত্র সিবিআইয়ের কাছে এসেছে, তা ধীরে ধীরে অনেক রহস্য উন্মোচন করবে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।
তা হলে সিবিআই কি বিনয়কে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করবে?
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, অভিযুক্তদের প্রত্যর্পণ নিয়ে দুবাই প্রশাসন ভারতের সঙ্গে খুবই সহযোগিতা করে। বিনয়ের নামে লুক আউট নোটিসও জারি করা হয়েছে। ফলে বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে তিনি গেলেই তা জানা সম্ভব হবে। বিনয় মিশ্র কি সে ক্ষেত্রে কলকাতার মেহুল চোক্সি, নীরব মোদী হয়ে যাবেন? সিবিআইয়ের দাবি, প্রাথমিক হিসেবে গত পাঁচ বছরে কয়লার কারবারের যে টাকার অঙ্ক উঠে এসেছে, তা অন্তত ১০ হাজার কোটি। তদন্তকারীদের মতে, ফলে সেই বিপুল সম্পত্তি রক্ষার জন্য অভিযুক্তরা সব রকম চেষ্টা করবেন। সিবিআই জানাচ্ছে, সিঙ্গাপুর, ব্যাঙ্কক, দুবাইয়ের বেশ কিছু সম্পত্তির উপরও নজর রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে পদক্ষেপ করা হবে।