সংঘাতে মৃত্যু পিয়ালির? তদন্তে সিবিআই

জবাব খুঁজছে সিবিআই। তদন্তের মূল স্রোত থেকে অনেকটা দূরে চলে যাওয়া একটি মৃত্যুর ঘটনাকে সারদা তদন্তের স্বার্থে নতুন করে টেনে আনতে চাইছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শুভাশিস ঘটক শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৯ ০৩:৪১
Share:

পিয়ালি মুখোপাধ্যায়

আত্মহত্যাই কি করেছেন আইনজীবী এবং অর্থ লগ্নি সংস্থা সারদার আইন দফতরের অন্যতম অফিসার পিয়ালি মুখোপাধ্যায়? নাকি তাঁর অপমৃত্যুর মূলে আছে অন্য কিছু? অন্য কিছু থেকে থাকলে সেটা বা সেগুলো কী? সারদা-সংঘাত? আর্থিক লেনদেনকে ঘিরে কোনও টানাপড়েন?

Advertisement

জবাব খুঁজছে সিবিআই। তদন্তের মূল স্রোত থেকে অনেকটা দূরে চলে যাওয়া একটি মৃত্যুর ঘটনাকে সারদা তদন্তের স্বার্থে নতুন করে টেনে আনতে চাইছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা।

আর্থিক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পরে সারদায় তালা পড়ে যায় ২০১৩ সালের ৩ মার্চ। তার ২৩ দিন পরে নিউ টাউন থানা এলাকার একটি ফ্ল্যাটে আইনজীবী পিয়ালির ঝুলন্ত মৃতদেহ পাওয়া যায়। তিনি সারদার আইন দফতরের অন্যতম আধিকারিক ছিলেন। সিবিআইয়ের দাবি, খুব কম সময়ের মধ্যে ওই আইনজীবীর হাতে প্রচুর টাকা এসে গিয়েছিল। অভিযোগ, পিয়ালির মৃত্যুর আগে ও পরে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের জীবনযাত্রার মান অনেকটাই বদলে যায়। একটি সূত্র জানাচ্ছে, মৃত্যুর প্রায় এক সপ্তাহ আগে পিয়ালি একা কয়েক দিন কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে ছিলেন, এমন কিছু তথ্যপ্রমাণ সিবিআইয়ের হাতে এসেছে। সেই হোটেলবাসের ফুটেজ (সিসি ক্যামেরা)-ও নাকি রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, কোথা থেকে এল এত টাকা?

Advertisement

তদন্তকারী‌রা জানান, সারদা তদন্তে নেমে বিশাল অঙ্কের টাকার খোঁজ করার সময় বিভিন্ন সাক্ষীদের বয়ানে ওই মহিলা আইনজীবীর নাম উঠে এসেছে। তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়েও এখন সংশয়-সন্দেহ প্রকাশ করছেন তদন্তকারীরা। যে-হেতু পিয়ালির কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি, তাই কী ভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল, সিবিআইয়ের কাছে তা পরিষ্কার নয়।

যাঁর কাছে এত টাকা, যিনি কয়েক দিনের মধ্যে মন্ত্রীসান্ত্রিদের এত ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন, সেই মহিলা আচমকা কেন ‘আত্মহত্যা’র পথ বেছে নেবেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তদন্তকারীরা। অভিযোগ, সারদায় পিয়ালির চাকরি হয়েছিল এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর সুপারিশে। পরে সিবিআইয়ের জেরায় সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন স্বীকার করেন, প্রভাবশালী ওই ব্যক্তির সুপারিশে পিয়ালিকে মোটা বেতনের চাকরি দিতে হয়েছিল।

সিবিআইয়ের এক তদন্তকারী জানান, মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও যে সেই মন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে পিয়ালির কথা হয়েছিল, তার তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত রিপোর্টে নিউ টাউন থানাও তার উল্লেখ করেছে। সারদা বন্ধ হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কোনও আর্থিক বিষয় ধামাচাপা দেওয়ার সঙ্গে পিয়ালির মৃত্যুর কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, সিবিআই সেটা খতিয়ে দেখতে চায়।

সিবিআইয়ের প্রশ্ন, আচমকা প্রচুর টাকা লেনদেন নিয়ে কি কোনও সমস্যা দেখা দিয়েছিল? শেষের দিকে প্রায় সমান ক্ষমতাসম্পন্ন একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে পিয়ালি যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছিলেন বলেও জেনেছে সিবিআই। তাদের প্রশ্ন, পিয়ালি কি সেই সংক্রান্ত কোনও সংঘাতেরই শিকার? রাজ্য সরকারের গঠিত সিটের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ তুলেছে সিবিআই। পিয়ালির মত্যুর তদন্তে নেমে পুলিশও কিছু তথ্য ‘এড়িয়ে’ গিয়েছিল কি না, সেই প্রশ্নের জবাব পেতে চাইছে সিবিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement