এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য। (ভিডিয়ো থেকে প্রাপ্ত ছবি)
বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতা বিমানবন্দরে নেমেই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালীন শিক্ষক নিয়োগে কোনও দুর্নীতি হয়নি। সিবিআই তাদের কাজ করছে বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সিবিআই-ই কলকাতায় তাঁর বাঁশদ্রোণীর ফ্ল্যাটটি ‘সিল’ করে দিয়েছে! ফলে সুবীরেশ কলকাতায় পৌঁছলেও নিজের বাড়িতে যেতে পারেননি। তাড়াহুড়ো করে গাড়িতে ওঠার আগে সংবাদমাধ্যম এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করে, তিনি কি বাঁশদ্রোণীর ফ্ল্যাটে যাচ্ছেন? সস্ত্রীক নিজের গাড়িতে উঠতে উঠতে ঘাড় নেড়ে সুবীরেশ জানান, তিনি বাঁশদ্রোণীর ফ্ল্যাটেই যাচ্ছেন। যদিও সেখানে তিনি তখন যাননি।
বুধবার তাঁকে টানা প্রায় ১০ ঘণ্টা জেরা করেছিল সিবিআই। কেন? প্রশ্ন করা হলে সুবীরেশ শুধু বলেন, “যাঁরা করেছে, তাঁদের জিজ্ঞাসা করুন।” তার পরেই তাড়াহুড়ো করে গাড়িতে উঠে বেরিয়ে যান তিনি। কিছু সময় পরে তাঁর নাগাল পাওয়া গেল বালিগঞ্জে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখানেও সংবাদমাধ্যম ধাওয়া করেছিল তাঁকে। বহু অনুরোধ-উপরোধের পর সেই বাড়ির সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বন্ধ কোলাপসিব্ল গেটের ভিতরে দাঁড়িয়ে কিছু প্রশ্নের জবাব দেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য। চোখেমুখে বিরক্তি নিয়েই তিনি বলেন, “পদ্ধতিগত ভুল (শিক্ষক নিয়োগে) থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু কোনও দুর্নীতি হয়নি।” সাংবাদিকরা এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হার গ্রেফতারি প্রসঙ্গে তাঁর অভিমত জানতে চাইলে সুবীরেশ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি তার পর সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় চলে যান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সুবীরেশ-পত্নীকে উত্তেজিত ভঙ্গিতে হাত নেড়ে কিছু বলতে দেখা যায়।
এর পর বিকেলের কিছু পরে সুবীরেশ যান বাঁশদ্রোণীর ফ্ল্যাটে। তবে তিনি স্বাভাবিক ভাবেই ফ্ল্যাটের ভিতরে ঢুকতে পারেননি। সেটি সিবিআই বুধবারেই ‘সিল’ করে দিয়েছিল। অগত্যা স্ত্রীকে নিয়ে ছাদে উঠে যান সুবীরেশ। সেখানেই পায়চারি করতে থাকেন তিনি। তাঁর স্ত্রী বসেন একটি চেয়ারে। তবে সাংবাদিকেরা তাঁকে ছাড়তে রাজি হননি। তাঁরা উঠে পড়েন পাশের বাড়ির ছাদে। সেখান থেকে নাগাড়ে প্রশ্ন করে যেতে থাকেন তাঁরা। অগত্যা সুবীরেশ ছাদে বসেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকেন। সেখানে তিনি আবার দাবি করেন, শিক্ষক নিয়োগে ‘পদ্ধতিগত ত্রুটি’ থাকলেও তাঁর আমলে ওই ক্ষেত্রে কোনও দুর্নীতি হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়েও দেন তিনি। তবে একই সঙ্গে সুবীরেশ জানান, সিবিআইয়ের প্রতি তাঁর ‘১০০ শতাংশ বিশ্বাস’ আছে।
‘সিল’ করা ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালাতে সিবিআই আধিকারিকরা আসতে পারেন কি না, এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য দেন সুবীরেশ-জায়া। অনুচ্চ কণ্ঠে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আসতে পারেন।’’ সুবীরেশ তখন একটি চেয়ারে বসে ফোন ঘাঁটছিলেন। ঘটনাচক্রে, সুবীরেশ-জায়ার ওই বক্তব্যের কিছু পরেই ওই ফ্যাটে আসেন সিবিআই আধিকারিকরা। তাঁরা ফ্ল্যাটে তল্লাশি শুরু করেন। সেই তল্লাশি রাত পর্যন্ত চলছে।