জেরা শেষে শোভন চট্টোপাধ্যায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
নারদ কাণ্ডে পরপর দু’দিন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে জেরা করল সিবিআই। বৃহস্পতিবার মেয়রের সামনে তাঁর ঘনিষ্ঠ এক জনকে বসিয়ে জেরা করা হয়েছিল। শুক্রবার শোভনকে জেরা করার ফাঁকেই তাঁর দুই নিরাপত্তারক্ষীকে ডেকে তাঁদের লিখিত বয়ান নেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। কয়েক দিনেক মধ্যে মেয়রকে ফের
তলব করা হবে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। আর মেয়রের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে আগামী ৪ অক্টোবর চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় নথি-সহ ফের ডেকে পাঠিয়েছে ইডি।
সিবিআইয়ের দাবি অনুযায়ী, দু’দিনের জেরাতেই শোভন জানিয়েছেন যে, তিনি নারদ স্টিং অপারেশনের ছদ্মবেশী সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েলকে ঠিক মনে করতে পারছেন না। ঠিক যেমন ইডি-র জেরার মুখে তিনি বলেছিলেন, ম্যাথুকে তিনি চেনেন না। সিবিআই অফিসারদের দাবি, সেই কারণেই শোভনের আশপাশের লোকেদের বয়ান নেওয়া হচ্ছে। সিবিআইয়ের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘ম্যাথুর ভিডিও ফুটেজ যে আসল, তা ফরেন্সিক পরীক্ষার পরে হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে। এখন ম্যাথুকে মেয়রের মনে না পড়ার বিষয়টি তদন্তের ক্ষেত্রে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং এ ক্ষেত্রে তিনি যে তদন্তে সহযোগিতা করছেন না, তা পরোক্ষে প্রমাণিত হচ্ছে।’’
এ দিন শোভনের জেরা যখন চলছে, তখন নিজের বাড়িতে দলের কোর কমিটির বৈঠকে নারদ-অভিযুক্ত নেতাদের আশ্বাসের কথা শুনিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার সিবিআই-ইডির মাধ্যমে ভয় দেখানোর চেষ্টা করলে তিনি ‘টুসকি’-তে উড়িয়ে দেবেন। সিবিআইয়ের জেরা শেষ হলে সরাসরি নবান্নে গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করেন মেয়র। এ দিন সাতটা নাগাদ নবান্নে ঢোকেন তিনি। কুড়ি মিনিট পরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই নীচে নেমে আসেন। মুখ্যমন্ত্রী বেরিয়ে গেলে তিনি আবার চোদ্দো তলায় মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে উঠে যান। রাত পর্যন্ত ওখানেই ছিলেন। তার আগে এ দিন সিবিআই অফিস থেকে বেরিয়ে আসার পরে শোভন বলেন, ‘‘সিবিআই ও মিডিয়া-র ট্রায়াল চলছে। আসল ট্রায়ালে আমিই জিতব।’’
আরও পড়ুন:বাংলা, ইংরেজি, হিন্দিতে ‘বাংলা’ই চাইছে রাজ্য
সিবিআইয়ের দাবি, শোভনের বেহালার বাড়ি ও কলকাতা পুরসভার অফিসে গিয়েছিলেন ম্যাথু। দু’জায়গাতেই শোভনের ওই দুই ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। তদন্তকারীদের কথায়, ম্যাথুর অসম্পাদিত ফুটেজে দেখা গিয়েছে, কলকাতা পুরসভায় মেয়রের অফিসের ‘অ্যান্টি চেম্বারে’ ম্যাথুর কাছ থেকে শোভন যখন টাকা নিয়েছিলেন, তখন সেখানে ডেপুটি মেয়র ইকবাল আহমেদ, মেয়রের এক পার্শ্বচর ও তাঁর বিশেষ আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন। সেই কারণেই বৃহস্পতিবার মেয়রের পার্শ্বচরের বয়ান নেয় সিবিআই।
তদন্তকারীদের দাবি, বেহালার বাড়িতে ম্যাথু যে দিন যান, সে দিন এক দেহরক্ষী তাঁকে মেয়রের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন। অসম্পাদিত ফুটেজে ওই দেহরক্ষীর ছবিও রয়েছে। শোভনের সঙ্গে দেখা করার পরে আর এক দেহরক্ষী ম্যাথুকে বাড়ির গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যান। শুক্রবার তাই ওই দুই দেহরক্ষীর লিখিত বয়ান নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। শোভনের মুখোমুখি বসিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁদের।
সিবিআইয়ের এক কর্তা জানান, অসম্পাদিত ফুটেজে দেখা গিয়েছে, বাড়িতে নিজের ঘরে হাফ-প্যান্ট পরে ম্যাথুর সঙ্গে কথা বলেছিলেন শোভন। ওই আলোচনায় তিনি নির্বাচনের পরে ম্যাথুকে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছিলেন বলে তদন্তকারীদের দাবি।