হাজিরা: সিবিআই দফতরে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
নারদ-কাণ্ডে হাওড়ার তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে মঙ্গলবার প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে জেরা করল সিবিআই। তাদের দাবি, ওই সাংসদ স্টিং অপারেশনে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এমনকী সেই টাকা তিনি কোন খাতে খরচ করেছেন, লিখিত ভাবে তা-ও জানিয়েছেন।
সিবিআইয়ের খবর, ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে নারদ স্টিং অপারেশনে হাওড়া সুরকিকলে এক দলীয় কর্মীর বাড়িতে ছদ্মবেশী সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েলের কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন প্রসূন। তদন্তকারীদের দাবি, ম্যাথুর বয়ান অনুযায়ী উলুবেড়িয়ার সদ্য-প্রয়াত সাংসদ সুলতান আহমেদই প্রসূনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন। লোকসভা নির্বাচনের প্রচার পর্বে এক সন্ধ্যায় ইসলাম নামে এক ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন ম্যাথু।
আরও পড়ুন: বাইকে চেপেই ট্রেন ধরতে আসবেন কি
এ দিন প্রসূনের লিখিত বয়ান নিয়েছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের কাছে সাংসদ জানান, নির্বাচনী তহবিলে তিনি ম্যাথুর টাকা নিয়েছিলেন। সেই টাকার হিসেব নির্বাচন কমিশনে দাখিলও করেন তিনি। এক তদন্তকারী জানান, সাংসদের বয়ান খতিয়ে দেখে আবার তাঁকে তলব করা হবে।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন: নিজের বয়ানে ম্যাথু দাবি করছেন, নির্বাচনের পরে ব্যবসায় সাহায্য করবেন বলে সাংসদ তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিলেন। নারদের অসম্পাদিত ফুটেজে ম্যাথুর সঙ্গে ওই সাংসদের কথোপকথন খতিয়ে দেখা হয়েছে। ব্যাবসায় সাহায্যের আশ্বাসের বিষয়েও সাংসদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
তদন্তকারীরা জানান, জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে ট্যাক্সিচালক ইসলামকে। নারদ স্টিং অপারেশনে ম্যাথুর সঙ্গেই থাকতেন ইসলাম। সাংসদের বাড়িতে গিয়ে টাকা দেওয়ার বিষয়ে ইসলামও বয়ান দিয়েছেন বলে জানান সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা।
নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের বেশ কয়েক জনকে ইতিমধ্যে জেরা করেছে সিবিআই। শাসক দল সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযুক্ত কয়েক জন দলীয় নেতাকে পরামর্শ দিয়েছেন, ‘‘ইডি-সিবিআই ডাকলে ভয় পাবেন না, শরীরও খারাপ করবেন না।’’
প্রয়াত সুলতান আহমেদকে শ্রদ্ধা জানাতে সোমবার সন্ধ্যায় মমতা তাঁর বাড়িতে যান। সেখানে ছিলেন দলের দুই সাংসদ সৌগত রায় ও প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুলতানের ভাই, বিধায়ক ইকবাল আহমেদ। তাঁরা সকলেই নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত। সেখানেই ঘরোয়া আলোচনায় মমতা এই পরামর্শ দেন। অনেকের মতে, ইডি, সিবিআই ডাকলে দলের নেতারা যাতে হাজিরা দেন, মুখ্যমন্ত্রীর ভয় না-পাওয়ার অভয়বাণীতে সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট। সৌগতবাবু অবশ্য পরে বলেন, সাধারণ ভাবে দলনেত্রী এই ধরনের পরামর্শ দিয়েই থাকেন।