স্টিং অপারেশনে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠার পরে সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করে তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু যাঁদের তদন্তের বিরুদ্ধে তাঁর মামলা, বৃহস্পতিবার সেই সিবিআইয়ের তদন্তকারীদেরই জেরার মুখে পড়লেন নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত ওই সাংসদ। তদন্তকারীরা এ দিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
একই মামলায় অভিযুক্ত দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় দ্বিতীয় বার তলবের নোটিস পেয়েও এ দিন সিবিআইয়ের দফতরে হাজির হননি। আইনজীবীর চিঠি পাঠিয়ে কিছুটা সময় চেয়ে নিয়েছেন সৌগতবাবু।
নারদ-কাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অপরূপাকে নোটিস দেওয়া হয়েছিল সোমবার। এ দিন তাঁকে প্রায় চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ভিডিও ফুটেজে তৃণমূলের যে-দুই মহিলা সাংসদকে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের এক জন বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার এবং অন্য জন আরামবাগের সাংসদ অপরূপা। কাকলিকে আগেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। এ দিন ছিল অপরূপার পালা। নারদ-কাণ্ডের তদন্তকারী অফিসার ডিএসপি সিবিআই রঞ্জিত কুমার নেতৃত্বে তিন অফিসার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
নারদ-কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েলের দেওয়া তিন লক্ষ টাকা যে তাঁর স্ত্রী নিয়েছিলেন, সে-কথা স্বীকার করে নিয়েছেন অপরূপার স্বামী, রিষড়ার তৃণমূল কাউন্সিলর সাকিল আলি। তাঁর দাবি, ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল লোকসভা ভোটের প্রচারে খানাকুলে গিয়েছিলেন অপরূপা। তিনি তখন রিষড়ার উপ-পুরপ্রধানও। প্রচারের ফাঁকে দুপুরে তিনি এক দলীয় কর্মীর বাড়িতে বিশ্রাম নিতে যান। সেখানেই সন্তোষ শঙ্করন নামে নিজের পরিচয় দিয়ে হাজির হন ম্যাথু স্যামুয়েল। একটি সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অপরূপাকে তিন লক্ষ টাকা দিতে চান। অপরূপা প্রথমে আপত্তি জানালেও ম্যাথু বলেন, তিনি ভোটের কাজে অন্যান্য রাজনৈতিক দলকেও টাকা দিচ্ছেন। তাই টাকা দিতে চাইছেন তৃণমূলকেও। তার পরে অপরূপা আর আপত্তি করেননি।
সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের বক্তব্য, তিনি খানাকুলের বিধায়ক তথা কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র ইকবাল আহমেদের মাধ্যেমে অপরূপার কাছে পৌঁছেছিলেন বলে ছদ্মবেশী সাংবাদিক ম্যাথু তাঁর বয়ানে জানিয়েছেন। বিধানসভা ভোটের মুখে ভিডিও ফুটেজ-সহ টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। তদন্তে নামে সিবিআই। তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে মামলা করেন অপরূপা। সেই মামলা এখনও চলছে।
সিবিআইয়ের এক কর্তা জানান, অপরূপার লিখিত বয়ান নেওয়া হয়েছে। টাকা নেওয়ার সময়ে তিনি ম্যাথুকে কোনও রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কি না, অপরূপার কাছে তা-ও জানতে চাওয়া হয়।
নারদ-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত সৌগতবাবু দ্বিতীয় বারের তলবেও সিবিআইয়ের কাছে যাননি। যদিও তিনি এ দিন বলেন, ‘‘সিবিআই আমাকে ডাকেনি। সেই জন্যই যাইনি।’’ তবে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় তিনি এ দিন সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হতে পারবেন না বলে সৌগতবাবু আইনি চিঠি দিয়েছেন। মাসখানেক আগেও তাঁর কাছে তলবি নোটিস পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সে-বার সংসদীয় কমিটির বৈঠক রয়েছে বলে জানিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়ে গিয়েছিলেন ওই সাংসদ। এ বারেও তিনি হাজিরা দেওয়ার জন্য সময় চেয়েছেন। কয়েক দিনের মধ্যেই সৌগতবাবুকে ফের তলবি নোটিস পাঠানো হবে জানান সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা।