পঞ্চসায়রে পৌঁছলেন সিবিআই কর্তারা।
কয়লা কাণ্ডে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্যালিকা মেনকা গম্ভীরকে টানা আড়াই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করল সিবিআই। মেনকার ব্যাঙ্ক লেনদেন সংক্রান্ত নথিপত্রও খতিয়ে দেখেছে তারা। যদিও সেই সব নথিপত্র কয়লাকাণ্ডের তদন্তে কী ভাবে সাহায্য করতে চলেছে, সে কথা স্পষ্ট করে জানাননি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা। তবে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ৩টে পর্যন্ত মেনকাকে টানা জেরা করার পর সিবিআই আধিকারিকরা জানিয়ে গিয়েছেন, প্রয়োজন পড়লে মেনকাকে আবারও জেরা করা হতে পারে।
সোমবার দুপুর ১২টার সময়েই পঞ্চসায়রের উপহার আবাসনে পৌঁছে যান। এখানেই থাকেন অভিষেকের শ্যালিকা মেনকা। তবে তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য বিআই আধিকারিকদের বাড়ির বাইরে আধঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। আবাসনে ঢোকা নিয়ে বিআই কর্তাদের সঙ্গে আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীদের টানাপোড়েন চলে দীর্ঘক্ষণ। তদন্তকারীদের গেট বন্ধ করে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি গাড়ি নিয়ে আবাসনের ভিতরে প্রবেশ করতেও দেননি রক্ষীরা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের। শেষে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেই পঞ্চসায়রে মেনকার আবাসনে ঢোকেন তাঁরা। সোমবার দুপুর ৩টি পর্যন্ত পর্যন্ত ৭ জন সিবিআই কর্তা মেনকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। সিবিআই সূত্রে খবর, খতিয়ে দেখা হয়েছে মেনকার ব্যাঙ্ক লেনদেন সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্রও। এছাড়া মেনকার লন্ডনে একটি অ্যাকাউন্টে লেনদেনের তথ্য খতিয়ে দেখেছে তারা। সেই সঙ্গে জানিয়ে গিয়েছে, প্রয়োজনে আবার জেরা করা হবে মেনকাকে।
কয়লা কাণ্ডের সাক্ষী হিসাবে জেরা করার জন্য সিবিআইয়ের তরফে নোটিস দেওয়া হয়েছিল অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্যালিকা মেনকাকে। রুজিরা জানিয়েছিলেন, সোমবার বেলা ১১টা থেকে বেলা ৩টের মধ্যে যে কোনও সময় সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা বাড়িতে এসে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। সোমবার পঞ্চসায়রে মেনকার আবাসন ‘উপহার’-এ সিবিআই পৌঁছে যায় দুপুর ১২টা নাগাদ। ৭ জন সিবিআই কর্তার দলে ছিলেন দু’জন মহিলা আধিকারিক। তবে মেনকার আবাসনের গেটে পৌঁছতেই বাধা দেওয়া হয় সিবিআই কর্তাদের।
আবাসনের গেট বন্ধ করে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। প্রায় আধঘণ্টা সিবিআই কর্তারা গেটের বাইরে অপেক্ষা করেন। পরে রক্ষীদের সঙ্গে সিবিআই আধিকারিকদের বেশ কয়েক উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর গেট খুলে দেওয়া হয়। যদিও তারপরও গাড়ি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে পারেননি তদন্তকারীরা। গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে আবাসনে প্রবেশ করতে হয় তাঁদের। সাড়ে বারোটা নাগাদ তাঁরা আবাসনের ৩ নম্বর টাওয়ারে ঢোকেন। তবে প্রথমে গাড়ি ঢুকতে বাধা দেওয়া হলেও পরে আবাসনে সিবিআইয়ের গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
সিবিআই কর্তারা আসবেন বলে, সোমবার সকালেই কলকাতা পুলিশের আধিকারিকরা ওই আবাসন চত্বরে ঘুরে যান। সাদা পোশাকে কলকাতা পুলিশের কর্তারা সেখানে মোতায়েন রয়েছেন। কয়লা কাণ্ডে অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা ও শ্যালিকা মেনকাকে সিবিআইয়ের নোটিস দেওয়ার ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছে তৃণমূল। ঘটনাচক্রে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এই নোটিস দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে সমন জারি করে বিধাননগরের বিশেষ আদালত। সোমবার ওই আদালতে হাজিরা দিতেও বলা হয়। কিন্তু ঠিকানা ভুল থাকায় সোমবার সেই মামলা ফেরায় আদালত। তার পরই অভিষেকের স্ত্রী ও শ্যালিকাকে সিবিআইেয়ের এই নোটিসের নেপথ্যে প্রতিহিংসার মনোভাব কাজ করেছে বলে মনে করছে তৃণমূল। যদিও সিবিআইয়ের দাবি, কয়লা-কাণ্ডে অভিষেকের স্ত্রী রুজিরার অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেন করা হয়েছে।
রবিবার অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা ও শ্যালিকা মেনকাকে সাক্ষী হিসেবে ডাকে সিবিআই। কয়লা কাণ্ডে যে সমস্ত অ্যাকাউন্টে বেআইনি লেনদেন হয়েছে, তার মধ্যে একটির সঙ্গে রুজিরার নাম জড়িত বলে অভিযোগ করেছিল সিবিআই। এর পাশাপাশি মেনকার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেন সংক্রান্ত তথ্যও জানতে চায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। বিশেষ করে লন্ডনে মেনকার একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন তাঁরা।