মুখ খোলাতে পিটারের পথেই ভিন্ রাজ্যে মদন

লক্ষ্য একই। পরিচিত পরিবেশের বাইরে এনে জেরা করা, যাতে আরও তথ্য বার করা যায়। যে কারণে এক জনকে মুম্বই থেকে দিল্লিতে উড়িয়ে আনা হয়েছে। আর এক জনকে এ বার কলকাতা থেকে ওড়িশায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে সিবিআই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:২২
Share:

লক্ষ্য একই। পরিচিত পরিবেশের বাইরে এনে জেরা করা, যাতে আরও তথ্য বার করা যায়। যে কারণে এক জনকে মুম্বই থেকে দিল্লিতে উড়িয়ে আনা হয়েছে। আর এক জনকে এ বার কলকাতা থেকে ওড়িশায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে সিবিআই।

Advertisement

প্রথম জন পিটার মুখোপাধ্যায়। দ্বিতীয় জন মদন মিত্র। দেশ জুড়ে আলোড়ন ফেলা দুই মামলার দুই অভিযুক্ত। শিনা বরা খুনে নাম জড়িয়েছে মিডিয়া ব্যারন পিটারের। আর পশ্চিমবঙ্গের সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র অভিযুক্ত সারদার লগ্নি-কেলেঙ্কারিতে। সম্প্রতি দু’জন সিবিআইয়ের জালেও পড়েছেন একই দিনে। জেরায় পিটারের জবাবে সন্তুষ্ট না হয়ে তাঁকে গ্রেফতার করে তদন্তকারী সংস্থা। সে দিনই মদনের জামিন খারিজ করে কলকাতা হাইকোর্ট। এখন মদনের পেট থেকে আরও কথা বার করার তাগিদে জেল বা এসএসকেএম হাসপাতালের চেনা ঠিকানা তো বটেই, কলকাতা শহর, এমনকী এ রাজ্যের চেনা গণ্ডি থেকে ওঁকে বার করে নিয়ে যেতে চাইছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা।

সেটা সম্ভব কী ভাবে? এ ক্ষেত্রে সিবিআইয়ের বড় হাতিয়ার হতে পারে রোজ ভ্যালি মামলা। গ্রেফতার করার পরে মদন মিত্রকে সারদা-সংশ্রব নিয়ে সিবিআই বেশ ক’দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ দিকে সারদার পাশাপাশি সিবিআইয়ের আতসকাচের তলায় চলে এসেছে রোজ ভ্যালি সংস্থার লগ্নি-কেলেঙ্কারিও, যা কিনা টাকার বহরে অনেক বড় মাপের দুর্নীতি বলে তদন্তকারীদের দাবি। হিসেব বলছে, রোজ ভ্যালি শুধু ওড়িশাতেই ৩৫ হাজার কোটি টাকা তুলেছিল।

Advertisement

এবং সিবিআইয়ের অভিযোগ, রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গে মদনের কয়েক কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। রোজ ভ্যালি-কাণ্ডে সিবিআই ওড়িশা ও অসমে মামলা দায়ের করেছে। গৌতম কুণ্ডুকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে ইডি। এ বার সেই মামলাতেও গোয়েন্দারা মদনের নাম ঢোকাতে চাইছেন, যার সুবাদে ওঁকে ভিন রাজ্যে নিয়ে গিয়ে জেরা করার রাস্তা খুলে যেতে পারে। সিবিআই-সূত্রের ইঙ্গিত, রোজ ভ্যালিতে মদনকে হেফাজতে পাওয়ার আবেদন জানানো হবে। আর্জি মঞ্জুর হলে তাঁকে ওড়িশায় নিয়ে গিয়ে জেরা করার সম্ভাবনা থাকছে।

রোজ ভ্যালির দু’টি কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর শিবময় দত্ত ও প্রাক্তন ডিরেক্টর অশোক সাহাকেও কলকাতায় গ্রেফতার করে ভুবনেশ্বরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এ বার ‘প্রভাবশালী’ প্রাক্তন মন্ত্রীকে ঠাঁইনাড়া করার প্রয়াসের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অভিজ্ঞ এক সিবিআই অফিসারের বক্তব্য: যে কোনও অভিযুক্তকে পরিচিত গণ্ডি থেকে সরিয়ে নিয়ে জেরা করলে বেশি ফল মেলে। ‘‘কারণ, চেনা জায়গায় সে যতটা নিশ্চিন্ত বোধ করে, অপরিচিত জায়গায় তা পারে না। উল্টে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।’’— বলছেন তিনি।

দুঁদে গোয়েন্দাদের আরও পর্যবেক্ষণ, পরিচিত লোকজন ও পরিবেশ থেকে অভিযুক্তকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার পাশাপাশি জেরার সময়ে ভাল ব্যবহার করলেও লাভ হয়। যে প্রসঙ্গে ইউপিএ আমলের টু-জি তদন্তের দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন তাঁরা। কী রকম?

সিবিআই-সূত্রের খবর, প্রাক্তন টেলি-যোগাযোগমন্ত্রী এ রাজাকে গ্রেফতার করে দিল্লিতে ব্যুরোর সদর দফতরের একটি ঘরে এনে রেখেছিলেন তদন্তকারী অফিসার বিবেক প্রিয়দর্শী। রাজার খাসতালুক, অর্থাৎ চেন্নাইয়ে বসে জিজ্ঞাসাবাদের ঝুঁকি নেননি। কারও সঙ্গে তাঁকে দেখা করতে দেওয়া হতো না। তবে রাজা যা চাইতেন, তা-ই জোগানো হতো। এমনকী, তিনি যোগাসন করতে চাইলেও গোয়েন্দারা বাধা দেননি। বরং যোগাসন শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রিয়দর্শী ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করেছেন।

তদন্তকারীর তরফে এমন ‘সহযোগিতামূলক’ হাবভাবে জেরার কাজ সহজ হয়েছিল। পিটারের বেলাতেও সিবিআই একই কৌশল নিচ্ছে। মদনের ক্ষেত্রেও তা-ই। সিবিআই-সূত্রের ইঙ্গিত, রোজ ভ্যালি-কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুকে এ বার সিবিআই হেফাজতে চাইবে। আর গৌতমকে হেফাজতে এনেই মদনকে হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা হবে। রোজ ভ্যালির সঙ্গে মদনের যোগাযোগ কতটা?

সিবিআইয়ের দাবি: গৌতম নিজেই ইডি-র জেরায় কবুল করেছেন যে, কলকাতায় এক পাঁচতারা হোটেলের বৈঠকে তাঁর সঙ্গে তদানীন্তন পরিবহণমন্ত্রীর কয়েক কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। কোম্পানির সমস্ত গাড়ির ছাড়পত্রের জন্য মদনের মদত রোজ ভ্যালির পিছনে ছিল। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘কলকাতার বেশ কিছু হোটেলে মদন বেশ ক’বার থেকেছেন। মন্ত্রীর সপার্ষদ হোটেলবাস ও পানভোজনের লক্ষাধিক টাকার বিলও তখন মিটিয়েছে রোজ ভ্যালি।’’

সিবিআইয়ের আশা, এমন বিবিধ জোরালো ‘তথ্য-প্রমাণের’ জোরে রোজ ভ্যালিতে মদন মিত্রকে হেফাজতে পাওয়া যেতেই পারে। সে ক্ষেত্রে তাঁকে জেরার করার উপযুক্ত জায়গা হতে পারে ওড়িশা। ওখানে থাকলে তিনি অসুস্থতার যুক্তিতে হাসপাতালে যাওয়ারও চেষ্টা করবেন না বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন।

‘‘কারণ, ওড়িশার হাসপাতালও ওঁর অচেনা!’’- মন্তব্য এক অফিসারের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement