প্রতীকী ছবি।
অপরাধস্থল একটি নির্দিষ্ট জায়গা হলেও কয়লা পাচারের অপরাধে একাধিক ঘটনা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এই মামলায় রেল, ইস্টার্ন কোলফিল্ড, সিআইএসএফ-এর মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার কর্মী ছাড়াও বেসরকারি লোকজনও জড়িত। ফলে কোনও নির্দিষ্ট এলাকার সীমারেখা টেনে দিলে যথাযথ তদন্ত হবে না — শুক্রবার এই মন্তব্য করে রাজ্যের সর্বত্র কয়লা পাচার মামলায় সিবিআইকে তদন্ত করার অধিকার দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
এর আগে এই মামলায় রেল এলাকার বাইরে রাজ্যের অন্যত্র সিবিআই তদন্ত করতে পারবে না বলে রায় দিয়েছিলেন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। তার উপরেও এ দিন স্থগিতাদেশ দিয়েছে বিচারপতি রাজেশ বিন্দল ও বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। একইসঙ্গে এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত অনুপ মাজী ওরফে লালার জামিনের আর্জিও খারিজ করেছে ডিভিশন বেঞ্চ।
এই মামলায় রায় দিতে গিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, এই মামলায় এফআইআরের বয়ানের খুঁটিনাটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন মামলাকারীর আইনজীবীরা। বিচারপতি বিন্দল রায়ে লিখেছেন, ‘‘এফআইআর কোনও বিশ্বকোষ নয়। এটা অপরাধ সম্পর্কিত কিছু তথ্য।’’ মামলার নিষ্পত্তি নিয়ে বলতে গিয়ে আদালত জানিয়েছে, এই আর্জি বকেয়া থাকলে তদন্তের ক্ষতি হবে। একইসঙ্গে লালার উদ্দেশে আদালতের মন্তব্য, কে তদন্ত করবে তা অভিযুক্ত ঠিক করে দিতে পারেন না। যথাযথ এবং নিরপেক্ষ তদন্ত তাঁর লক্ষ্য হওয়া উচিত। প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ‘জনগণের আস্থা’ বজায় রাখতেই এই তদন্ত প্রয়োজন।
সিবিআইকে রাজ্যে কোনও মামলার তদন্ত করতে দেওয়ার ‘সাধারণ সম্মতি’ ২০১৮ সালে প্রত্যাহার করে নিয়েছে নবান্ন। সিবিআই তদন্ত নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কয়লা মামলায় সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়েও সেই প্রশ্ন উঠেছে। যদিও সূত্রের দাবি, কয়লা পাচারে ইতিমধ্যেই রাজ্যের শাসক দলের ‘অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ’ কিছু ব্যক্তির নাম জড়িয়েছে। কয়লা পাচারের মামলায় রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত যে ভাবে সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করেছেন তাকে কটাক্ষও করেছেন কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটা।
আইনজীবীদের অনেকে মনে করছেন, এই মামলায় শুধু প্রভাবশালী নয়, রাজ্যের পুলিশকর্তাদের একাংশও জড়িয়েছেন। কয়েক জনকে তলবও করেছে সিবিআই। রাজ্যের দুই আইপিএস অফিসারের মামলা এখনও আদালতে বকেয়া রয়েছে। লালার তরফে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার রাস্তা খোলা রয়েছে বলেও আইনজীবীদের অনেকে জানান।