আদালত থেকে বেরিয়ে আসছেন ঘুষ কাণ্ডে ধৃত ডিএসপি দেবেন্দ্র কুমার। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।
সিবিআইয়ের দুই শীর্ষ কর্তার দ্বন্দ্বের জেরে সারদা-রোজভ্যালি তদন্তের পরবর্তী গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানা ছিলেন রাজ্যের ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার তদন্তের তদারকি অফিসার। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের হওয়ায় আস্থানা আপাতত আর দফতরে আসছেন না। ফলে অন্তত মঙ্গলবার পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, তাতে ওই তদন্তে তদারকি অফিসার নতুন করে নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত তেমন ভাবে এগোতে চাইছেন না কলকাতার সিবিআই কর্তারা।
সিবিআই সূত্রের খবর, আস্থানা-মামলা আদালতে গড়ানোর পরে কলকাতায় সিবিআই দফতর আপাতত ‘ধীরে চলতে’ চাইছে। রাজ্যের যে আইপিএস অফিসারদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকার পরিকল্পনা ছিল, আপাতত তাঁদের আর না-ডাকার ভাবনা রয়েছে। নবান্নের কাছ থেকে সারদা বিষয়ক ফাইলপত্র চাওয়ার ক্ষেত্রে ‘আক্রমণাত্মক’ হওয়ার প্রশ্নেও ‘ধীরে’ চলার ইঙ্গিত এদিন পাওয়া গিয়েছে। তারা। ‘প্রভাবশালী’দের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন চেয়ে কলকাতা অফিসের পাঠানো ফাইল দিল্লির সদরেই আটকে। দিন দশেক আগে গড়বেতা গিয়ে একটি ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার ফিল্মসিটির হাল-হকিকত জেনে এসেছিলেন তদন্তকারীরা। এমপিএস, আইকোর, প্রয়াগ, টাওয়ার গোষ্ঠী নিয়েও নতুন করে তদন্ত শুরু হচ্ছিল। তা এখন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলেই সিবিআই আধিকারিকদের একাংশের ধারণা। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কিছু রুটিন কাজ চলবে। কিন্তু যে সব ‘বড়’ কাজ করার অনুমোদন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে, তা আপাতত আসার লক্ষণ নেই। নতুন তদারকি অফিসার নির্দিষ্ট হওয়ার পর যা হওয়ার হবে বলে আপাতত মনে হচ্ছে।’’
কবে নতুন তদারকি আধিকারিক আসতে পারেন?
বর্তমান ডিরেক্টর অলোক বর্মা জানুয়ারিতে অবসর নিচ্ছেন। সিবিআই কর্তাদের একাংশের মতে, তার আগে মইন কুরেশি মামলায় আদালতে আস্থানার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণেই ব্যস্ত থাকবে সংস্থার দিল্লি টিম। ফলে নতুন অধিকর্তা নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সারদা-রোজভ্যালি মামলা তেমন ভাবে এগনো সম্ভব নয় বলেই
তাঁদের ধারণা।
আরও পড়ুন: আস্থানার কাছেই নারদের রিপোর্ট
সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, সিবিআই চলে ‘দিল্লি স্পেশাল পুলিশ এস্টাবলিশমেন্ট ল’ মোতাবেক। সেই আইনে কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীর দুর্নীতির তদন্ত সিবিআই করতে পারে। তবে হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিলে সিবিআই রাজ্য সরকারি বিষয়েও তদন্ত করতে পারে। যেমন — সারদা, রোজভ্যালি তদন্ত। অথচ, দুর্নীতি দমন আইনে রাজ্য পুলিশ যে কোনও সময়ে সিবিআই-সহ অন্য কেন্দ্রীয় সংস্থার অফিসারদের বিরুদ্ধে মামলা করতেই পারে। মইন কুরেশি মামলায় যে ভাবে অভিযুক্ত সতীশ সানার বয়ানের ভিত্তিতে শীর্ষ কর্তা আস্থানার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করা হয়েছে, সিবিআই অফিসারদের আশঙ্কা, তাকে ঢাল করে রাজ্যের পুলিশও সিবিআই অফিসারদের বিরুদ্ধে কোনও স্পর্শকাতর মামলাকে ‘কাজে’ লাগাতে পারে।
এক সিবিআই আধিকারিকের কথায়, ‘‘চিটফান্ড মামলায় অভিযুক্তদের কেউ যদি রাকেশ আস্থানা মডেলে সিবিআই অফিসারদের নামে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ করেন, তখন কী হবে?’’
সিবিআইয়ের দাবি, ইডি কর্তা মনোজ কুমারের বিরুদ্ধে আগেই মামলা হয়েছে। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত কলকাতার এক ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে দিল্লির সিবিআই অফিসারদের সম্প্রতি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে হাওড়ার পুলিশ।
দিল্লির বিবাদ নিয়ে কলকাতার তদন্ত আটকাবে কেন? এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘সিবিআইয়ের যে কোনও তদন্ত একটি কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে চলে। সেটিই এখন ভেঙে পড়েছে। ফলে তদন্তকারীদের বড় অংশ শুধু হতাশই নন, বিভিন্ন রাজ্য থেকে ডেপুটেশনে আসা আইপিএস-দের অনেকে সিবিআই ছেড়ে নিজেদের ক্যাডারে ফেরত যেতে চাইছেন। অভিযুক্তের
বয়ানের ভিত্তিতে যদি তদন্তকারীই গ্রেফতার হন, তা হলে আর কোন ভরসায় সিবিআইয়ের মান বাঁচিয়ে কাজ করা সম্ভব?’’