বাগদার সেই রঞ্জন ওরফে চন্দন মণ্ডলকে গ্রেফতার করল সিবিআই! ফাইল চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বাগদার বাসিন্দা রঞ্জন ওরফে চন্দন মণ্ডলকে গ্রেফতার করল সিবিআই। দুর্নীতিকাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুক্রবার সকালেই তাঁকে নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। সিবিআইয়ের অভিযোগ, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে গিয়েছেন চন্দন। তার পরই তাঁকে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুক্রবার দুপুরে তাঁকে আলিপুর আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁকে সোমবার পর্যন্ত চার দিনের সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
বছরখানেক আগে ‘সৎ রঞ্জন’ নামে একটি ভিডিয়ো ইউটিউবে প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন। ওই ভিডিয়োয় তিনি দাবি করেছিলেন, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার জনৈক রঞ্জন টাকা নিয়ে বহু লোককে স্কুলের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। গোপনীয়তার স্বার্থে ওই সময় রঞ্জনের আসল নাম প্রকাশ্যে আনেননি উপেন। পরে অবশ্য শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানিতে তা স্বীকার করে নেন তিনি। এর পরেই উচ্চ আদালতের নির্দেশে চন্দনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তে নামে সিবিআই। হাই কোর্ট জানায়, প্রয়োজনে চন্দনকে নিজেদের হেফাজতেও নিতে পারেন তদন্তকারীরা। তার ভিত্তিতেই চন্দনের নামে এফআইআর দায়ের করা হয়। মামলাকারীকেও তদন্তকারীরা ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
চন্দনের আইনজীবী দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেলকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে। প্রাক্তন মন্ত্রী উপেনের নাম না করেই তিনি বলেন, “ব্যক্তিগত রাগের কারণে বার বার চন্দনের নাম করে তাঁকে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি ফাঁসিয়েছেন।” রঞ্জন সিবিআইয়ের কাছে যাবতীয় তথ্য জমা দিয়েছিলেন এবং তদন্তে সহযোগিতা করেছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।
টাকা নিয়ে স্কুলে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ‘কারিগর’ বাগদার চন্দনের বাড়িতে গত জুলাই মাসে হানা দিয়েছিল সিবিআই। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস-কথিত ‘রঞ্জন’ই যে আসলে চন্দন মণ্ডল, তা কলকাতা হাই কোর্টে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানি চলাকালীন প্রকাশ্যে এসেছিল আগেই। তার পরেও কেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা চন্দন ওরফে ‘রঞ্জন’-এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল।
উপেন তাঁর অভিযোগে জানিয়েছিলেন টাকার বিনিময়ে বহু চাকরিপ্রার্থীকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন রঞ্জন ওরফে চন্দন। তবে চাকরি পাইয়ে দিতে না পারলে তিনি নাকি সুদ-সহ অর্থ ফিরিয়ে দিতেন। সে কারণে উপেন এক জায়গায় চন্দনকে ‘সৎ চন্দন’ বলেও অভিহিত করেন। চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা বাগদা থেকে কলকাতায় প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছে দিতেন চন্দন—এমনই দাবি করেছিলেন উপেন। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চাকরিপ্রার্থীদের নেওয়া টাকা বিভিন্ন হাত ঘুরে কাদের কাছে পৌঁছত, রঞ্জনকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তা খতিয়ে দেখতে পারে সিবিআই।