‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিল সিবিআই। —ফাইল চিত্র।
প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিল সিবিআই। এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত হুগলির বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। রয়েছে অরুণ হাজরা নামে এক ব্যক্তির নামও। শুক্রবার বিচার ভবনে কলকাতা নগরদায়রা আদালতে এই চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক মামলায় অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছিলেন ‘কাকু’। তিনি আপাতত বেহালায় নিজের বাড়িতে রয়েছেন।
সিবিআইয়ের চার্জশিটের এই অরুণকে নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। তিনি বর্তমানে বিজেপি নেতা। তবে আগে তৃণমূলে ছিলেন। অভিযোগ, তাঁর সুপারিশে ‘কাকু’র মাধ্যমে চাকরি হয়েছে কিছু প্রার্থীর। শুক্রবার অন্য কাজে বিচারভবনে গিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। অরুণকে নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে কুণাল বলেন, ‘‘অরুণ ওরফে চিনু হাজরাকে আমরা চিনি। একসময়ে কংগ্রেস করতেন, পরে তৃণমূল করেছেন কিছু দিন। লোকসভা ভোটের আগে তাপস রায় যখন বিজেপিতে যোগ দিলেন, তখন তিনিও বিজেপিতে যান। তবে চার্জশিটের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ওখানে যাঁর নাম আছে, তিনিই এই অরুণ কি না, আমি বলতে পারব না। যদি তা-ই হয়, তবে তিনি এখন বিজেপিতে। ফলে বিজেপিকে এর জবাব দিতে হবে।’’
প্রাথমিক দুর্নীতি মামলাতেই ‘কাকু’কে প্রথমে গ্রেফতার করেছিল ইডি। দীর্ঘ দিন তিনি প্রেসিডেন্সি জেলে ছিলেন। পরে একই মামলায় তাঁকে সিবিআই গ্রেফতার করে। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে ‘কাকু’ আদালতে সশরীরে হাজিরা দিতে পারছিলেন না। ফলে সিবিআইকে বার বার খালি হাতে ফিরতে হচ্ছিল। আদালতে তারা জানিয়েছিল, ‘কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা প্রয়োজন। সেই কারণেই তাঁকে ‘শোন অ্যারেস্ট’ (হেফাজতে থাকা ব্যক্তিকে আবার হেফাজতে নেওয়া) করতে চায় সিবিইআই। ‘কাকু’র অসুস্থতার কারণে দীর্ঘ দিন সেই প্রক্রিয়া ঝুলে ছিল। পরে তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আদালত থেকে এর পর শর্তসাপেক্ষে অন্তর্বর্তী জামিন পান সুজয়কৃষ্ণ। শুক্রবার তাঁর বিরুদ্ধে প্রাথমিক মামলার চার্জশিট জমা দিল কেন্দ্রীয় সংস্থা।
অসুস্থতা কাটিয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ‘কাকু’ বিচার ভবনে হাজিরা দিয়েছিলেন। সে দিনই তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি বিচার ভবন থেকে ‘কাকু’র চূড়ান্ত অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করা হয়। ইডির মামলা থেকে আগেই তিনি জামিন পেয়েছিলেন। তবে আদালত জানায়, বেহালার বাড়ি ছেড়ে বেরোতে পারবেন না সুজয়কৃষ্ণ। সিবিআইয়ের নজরদারি থাকবে তাঁর উপরে।
শান্তনু এবং সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়ের নামও নিয়োগ মামলার তদন্তে উঠে এসেছিল। শান্তনুকে আগেই গ্রেফতার করে ইডি। পরে তাঁকে হেফাজতে নিয়েছিল সিবিআই। তাঁদেরও কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নিয়োগ মামলার তদন্তে নেমে একটি অডিয়ো হাতে পেয়েছিল সিবিআই। তার সঙ্গে সন্তু এবং শান্তনুর কণ্ঠস্বর মিলিয়ে দেখেন তদন্তকারীরা। সিবিআইয়ের অনুমান ছিল, ওই অডিয়োয় দু’জনের কণ্ঠ শোনা গিয়েছে। এ বার সেই সংক্রান্ত চার্জশিট জমা দেওয়া হল আদালতে। ‘কাকু’ এবং শান্তনুর নাম রয়েছে তাতে।