নারদ মামলায় প্রভাবশালী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রধানত দুর্নীতির অভিযোগই এনেছে সিবিআই। সেই দুর্নীতি দমন আইনেই এ বার অভিযোগ আনা হল রোজ ভ্যালি কাণ্ডে তৃণমূলের দুই সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাপস পাল-এর বিরুদ্ধে। এত দিন ধরে সারদা, রোজ ভ্যালি-সহ অন্য যে সব অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত করে চার্জশিট জমা দিয়েছে, সেখানে কখনওই দুর্নীতি দমন আইনে অভিযোগ আনা হয়নি।
এই প্রথম সেই অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুবনেশ্বর আদালতে সুদীপ ও তাপসের নামে চার্জশিট পেশ করল সিবিআই। এই চার্জশিটে রোজ ভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডু এবং তাঁর একটি সংস্থার
নামও রয়েছে। সিবিআইয়ের মতে, সুদীপের নাম উঠে এসেছে নারদ মামলাতেও। সিবিআই সূত্রের খবর, সুদীপ ও তাপসের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ, ষড়যন্ত্র ও জালিয়াতির অভিযোগও আনা হয়েছে।
রোজ ভ্যালি কাণ্ডে গত ৩ জানুয়ারি সুদীপকে এবং ৩০ ডিসেম্বর তাপসকে কলকাতায় গ্রেফতার করে ভুবনেশ্বরে নিয়ে যাওয়া হয়। সিবিআইয়ের দাবি, পরবর্তী কালে তদন্ত যত এগিয়েছে, দু’জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও দৃঢ় হয়েছে।
আরও পড়ুন:দখল করব দিল্লি, পাল্টা ডাক দিদির
রোজ ভ্যালি থেকে তাঁর দু’টি গাড়ির ব্যাঙ্ক ঋণের মাসিক কিস্তি এবং প্রচুর নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে বলে সুদীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ছিল রোজ ভ্যালির টাকায় সপরিবারে সুদীপের বিদেশ সফর নিয়েও। সিবিআই সূত্রের খবর, তাঁর সেই বিদেশ সফরের জন্য খরচ হয়েছিল ২২ লক্ষ টাকা। অভিযোগ, তার মধ্যে ১৭ লক্ষ এসেছিল রোজ ভ্যালির অ্যাকাউন্ট থেকে। স্ত্রী নয়নাকে নিয়ে
২০১২-র অক্টোবরে সুদীপ সুইৎজারল্যান্ডের জুরিখ, লুসার্ন, ইতালির পিসা, রোম, ফ্লোরেন্স-সহ বিভিন্ন শহরে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেছে সিবিআই। চার্জশিটে বলা হয়েছে, এই দুই সাংসদ শুধু যে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে চিঠি লিখে রোজ ভ্যালির পক্ষে ছাড়ের সুপারিশ করেছেন তাই নয়, সংস্থার মঞ্চে উঠে বিভিন্ন লগ্নি স্কিমের প্রচারও করেছেন। বিনিময়ে বিপুল অর্থের পাশাপাশি নানা বহুমূল্য উপহারও নিয়েছেন।
তাপসের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, সাংসদ হয়েও তিনি রোজ ভ্যালি থেকে নিয়মিত বেতন নিতেন। অভিযোগ, রোজ ভ্যালি বেআইনি ভাবে বাজার থেকে টাকা তুলছে সুদীপ জানতেন। তবে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে অন্য অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও রোজ ভ্যালির নাম চেপে যান তাপস। সিবিআইয়ের দাবি, রোজ ভ্যালি-র চলচ্চিত্র বিভাগের ডিরেক্টর থাকাকালীন মাসিক বেতনের বাইরে প্রচুর নগদ টাকাও নিয়েছেন তাপস। তার অঙ্ক ১০ কোটি টাকার বেশি বলেও সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে।