ফাইল চিত্র।
কয়লা পাচার কাণ্ডের তদন্তে কলকাতা হাইকোর্টে কিছুটা ধাক্কা খেল সিবিআই।
তাদের করা এফআইআর বহাল রাখলেও বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য বুধবার জানিয়ে দিয়েছেন, রেলের জায়গার বাইরে সিবিআইকে তল্লাশি করতে হলে রাজ্যের অনুমতি নিতে হবে। তবে তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের সমন পাঠিয়ে তলব এবং জেরা করার অনুমতি সিবিআইকে দিয়েছে হাইকোর্ট। এই মামলাটি দায়ের করেছিলেন কয়লা পাচারের মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত অনুপ মাজী ওরফে লালা।
অনেকেই মনে করছেন, এর ফলে কয়লা বা গরু পাচারে অভিযুক্তদের বাড়ি, অফিসে হানা দিতে সমস্যা হবে সিবিআইয়ের। শুধু সমন পাঠানোর পরেও অভিযুক্তেরা হাজিরা না-দিলে আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করাতে পারবে। হাইকোর্টের রায়ে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, কয়লা পাচারের মামলায় এফআইআর আইনসঙ্গত। সেখানে আদালত হস্তক্ষেপ করবে না। একই সঙ্গে আদালতের পর্যবেক্ষণ, পশ্চিমবঙ্গে রেলের এলাকায় তদন্ত করতে পারবে কিন্তু একই মামলায় রেলের এলাকার বাইরে তদন্ত করতে পারবে না, এটা সিবিআইয়ের কাছে বাস্তবিক সমস্যা। তবে যেহেতু সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তাই এই সিদ্ধান্ত অনিবার্য।
অনেকেই বলছেন, কয়লা পাচার মামলায় অনেক রাঘববোয়ালের নাম জড়িয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাড়িতে তল্লাশি না করেও কী ভাবে সিবিআই তাদের জালে আটক করে সেটাই দেখার। সূত্রের খবর, আদালতের বুধবারের রায়ের
বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার কথা ভাবছে সিবিআই।
প্রসঙ্গত, গরু ও কয়লা পাচারের মামলায় তলব করা হয়েছে এ রাজ্যের একাধিক পুলিশকর্তাকে। তাঁদের কয়েক জন এই মামলায় সিবিআইয়ের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টে মামলা করেছেন। এই রায় তাঁদের কোনও সুবিধা হবে কি না, তা নিয়েও জল্পনা চলছে প্রশাসনিক মহলে।
এই মামলায় লালার তরফে সাবির আহমেদ, ফারুক রাজ্জাক-সহ সাত জন আইনজীবীর যুক্তি ছিল, রেলের এলাকা বলা হলেও তা আসলে রাজ্য সরকারের অধীনে। রাজ্যের দাবি, তাদের অনুমোদন ছাড়া তাদের এলাকার মধ্যে সিবিআই হানা দিতে পারে না। রেলের এলাকাকে ধরেই সে কথা বলা হয়েছিল বলে জানান তাঁরা। সিবিআইয়ের তদন্তের বিরোধিতা করে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানিয়েছিলেন, রেলের এলাকায় কোনও চুরি বা সম্পত্তি নষ্ট হলে তার তদন্তের দায়িত্ব আরপিএফের, সিবিআইয়ের নয়।
সিবিআইয়ের পক্ষে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ওয়াই জে দস্তুর আদালতে পাল্টা যুক্তি দেন, রেলরক্ষী বাহিনী প্রথম পাচার হওয়া কয়লা ধরে এবং এফআইআর করে। এফআইআর হওয়ার পরবর্তী কালে তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে গিয়েছে। আদালতে দু’পক্ষের সওয়াল জবাব থেকে উঠে এসেছে যে এই মামলার মূল বিষয় অবৈধ ভাবে কয়লা উত্তোলন এবং কয়লা পাচারের ঘটনা। এর সঙ্গে রেলের সম্পত্তির কোনও যোগসূত্র নেই, বিষয়টি রেল সংক্রান্ত আইনের আওতায় পড়েও না। তবে রেলের এলাকায় সিবিআইয়ের তদন্তের অধিকার আছে তাও জানিয়েছে আদালত।