আসানসোলে কোর্ট চত্বর থেকে বেরোনোর পথে। ছবি: পাপন চৌধুরী
অনুব্রত মণ্ডলকে বাড়ি থেকেই আটকের পরিকল্পনা তারা আগেই তৈরি করে ফেলেছিল বলে সিবিআই সূত্রের দাবি।
সিবিআইয়ের দাবি, সপ্তাহখানেক আগে থেকেই ইলামবাজার-সহ অনুব্রতর বাড়ির আশপাশের বিভিন্ন জায়গা ‘রেকি’ বা জরিপ করা শুরু হয়। পাশাপাশি একটি অতিথিশালায় ঘাঁটি গেড়ে ছিলেন তদন্তকারী এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। গত শনিবার দিল্লির সদর দফতরের কয়েক জন কর্তা কলকাতায় আসেন। অনুব্রতকে বাড়ি থেকে কী ভাবে আটক করা হবে, তা নিয়ে কয়েক দফায় বৈঠক হয়।
গত সোমবার এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে বোলপুরে ফিরে যাওয়ার পরেই অনুব্রতকে বাড়ি থেকে আটক করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিবিআইয়ের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘মঙ্গলবার ই-মেল করে এবং বাড়িতে গিয়ে তলবি নোটিস দেওয়া সত্ত্বেও বুধবার যে তিনি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে কলকাতায় আসবেন না, তারও আগাম খবর পাওয়া গিয়েছিল। তাঁর আইনজীবীদের ইঙ্গিত দেওয়া হয়, আদালতে অনুব্রতের বিরুদ্ধে নথি পেশ করে কড়া আইনি পদক্ষেপের পথে হাঁটা হবে। আমরা জানতাম, আইনজীবীরা ফিরে গিয়ে এ কথা বললে অনুব্রত আশ্বস্ত হয়ে বাড়িতেই থাকবেন। আমাদের পরিকল্পনার কথা তাঁদের বুঝতে দেওয়া হয়নি। ওটাই ছিল দাবার প্রথম চাল।’’
বুধবার রাত সাড়ে ৯টার পরে অনুব্রতকে আটকের প্রস্তুতি শুরু হয়। সিবিআইয়ের কয়েক জন তদন্তকারী অফিসার-সহ কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক কোম্পানি (৯২ জন) জওয়ান প্রায় তিন দফায় বোলপুরের উদ্দেশে রওনা হন। ভোর ৩টে নাগাদ কলকাতার নিজাম প্যালেস থেকে তদন্তকারী অফিসার ও জওয়ানদের শেষ গাড়ি বোলপুরে রওনা হয়।
বুধবার গভীর রাত থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনী অনুব্রতের এলাকা ঘিরতে শুরু করে। অফিসারেরাও পৌঁছে যান। সিবিআইয়ের ওই শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘সূর্য ওঠার আগেই অনুব্রতের বাড়ি-সহ আশপাশের এলাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতের মুঠোয় চলে আসে। অনুব্রতের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি অতিথিশালায় বৈঠকও করেন তদন্তকারীরা। কেন্দ্রীয় বাহিনী বাড়ি ঘিরে ফেলার পরে বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৯টা নাগাদ তদন্তকারী অফিসারেরা অনুব্রতের দরজায় পৌঁছে যায়।’’ এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘গত শুক্রবার থেকে অনুব্রতর বাড়ির পাশে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সেন্ট্রাল আইবি) অফিসারেরা নজরদারি চালান। অনুব্রত-সহ তাঁর ঘনিষ্ঠদের উপরে, চিনার পার্কে অনুব্রতের ফ্ল্যাটেও চলে নজরদারি।’’
বাড়িতে গিয়েই কেন আটক? তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, অনুব্রত যে অসুস্থতার অজুহাতে ক্রমাগত জিজ্ঞাসাবাদ এড়ানোর ছক কষেছিলেন, তা বোঝাই যাচ্ছিল। চিকিৎসার জন্য তিনি ভিন্ রাজ্যের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তোড়জোড়ও করছেন, এমনও তদন্তকারীরা জানতে পেরেছিলেন।
সপ্তাহখানেক আগে বীরভূমে অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ ৩ ব্যবসায়ীর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ১৭ লক্ষ টাকা, ১০টি মোবাইল, ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের সিপিইউ বাজেয়াপ্ত করা হয়। সিবিআই কর্তার কথায়, ‘‘সেখান থেকে উদ্ধার হওয়া নথি থেকে গরু পাচারে অনুব্রতর যোগ সংক্রান্ত জোরালো তথ্য হাতে আসে। তার আগেই এই যোগ অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছিল তাঁর দেহরক্ষী সেহগাল হোসেন ও গরু পাচারে মূল অভিযুক্ত এনামুল হকের বয়ান। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও অনুব্রত তদন্তে সহযোগিতা করছিলেন না। তাঁর আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির হদিসও পাওয়া গিয়েছে।’’ অনুব্রত যে ‘প্রভাবশালী’, আদালতে তার ‘প্রমাণ’ও পেশ করতে চলেছে সিবিআই। তার সপক্ষে সিবিআইয়ের অন্যতম প্রধান যুক্তি, লালবাতি গাড়ি। সরকারের উচ্চপদস্থ কেউ না হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে লালবাতি লাগানো গাড়িতে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। বিষয়টি সিবিআই আদালতে জানানোর পরে সেই লালবাতি খুলে নেওয়া হয়েছে। তবে, বেআইনি ভাবে লালবাতি লাগিয়ে সরকারি বিধি ভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে মাত্র ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।