—ফাইল চিত্র।
বিধাননগর পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর দেবরাজ চক্রবর্তীর দমদম পার্কের বাড়ি থেকেও বেরিয়ে গিয়েছে সিবিআই। তৃণমূল বিধায়ক অদিতি মুন্সীর স্বামী দেবরাজের দু’টি বাড়িতে বৃহস্পতিবার সকালে হানা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। দুপুর ১টা নাগাদ তাঁর রাজারহাটের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা। এর পর দুপুর পৌনে ৩টে নাগাদ তাঁরা বেরোন দমদম পার্কের বাড়ি থেকে। সিবিআই আধিকারিকেরা বেরিয়ে যাওয়ার পর দেবরাজ বলেন, ‘‘ওঁরা আমার কাছে কিছু নথি চেয়েছিলেন। সে সব দিয়েছি। তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করব।’’
দেবরাজ জানিয়েছেন, সকাল ৮টা নাগাদ সিবিআইয়ের সাত জনের একটি দল তাঁর বাড়িতে আসে। সেই সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। ‘সার্চ ওয়ারেন্ট’ নিয়েই এসেছিল সিবিআই। তল্লাশিও চালিয়েছে। তবে দেবরাজ বলেন, ‘‘আমার বাড়ি থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পায়নি। আমাকে ওরা সার্চ লিস্ট দিয়েছে। আমার আয়কর রিটার্ন, ব্যাঙ্কের নথি, আমার পরিবারের সদস্যদের ব্যাঙ্কের নথি, যা যা চেয়েছিল, সব দিয়েছি।’’
কাউন্সিলর তথা মেয়র পরিষদের সদস্য দেবরাজ জানান, সিবিআই কর্তারাই তাঁকে জানিয়েছেন, তাঁরা নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে এসেছিলেন। আদালতের নির্দেশ নিয়েই এসেছিলেন তাঁরা। তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে দেবরাজ বলেন, ‘‘আমার নথিগুলি ওরা খতিয়ে দেখার জন্য নিয়ে গিয়েছে। আমি ওদের বলেছি, আরও যদি কোনও নথি লাগে, আমি দেব। তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করব।’’
ঘটনাচক্রে, বুধবারই ধর্মতলার সভামঞ্চ থেকে রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না! তার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নিয়োগ মামলার তদন্তে সিবিআইয়ের এই তৎপরতা। সে প্রসঙ্গে দেবরাজ বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে কেন্দ্রীয় সংস্থা এ ভাবে হানা দিচ্ছে, কারণ আমরা তৃণমূল করি।’’
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান শুরু করে সিবিআই। সকাল ৯টা ১০ মিনিটে রাজারহাটে দেবরাজের বাড়িতে পৌঁছয় সিবিআইয়ের দলটি। তার কিছু ক্ষণ পর সকাল ৯টা ৪০ মিনিট নাগাদ দেবরাজের গাড়ি এসে পৌঁছয় তাঁর বাড়ির সামনে। সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ভিতরে ঢুকে যান। এর পর দুপুর ১টা নাগাদ তাঁকে নিয়ে আবার বাইরে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় সিবিআইয়ের গোয়েন্দাদের। দেবরাজকে সঙ্গে নিয়েই তাঁর দমদম পার্কের ঠিকানায় যান তাঁরা। যদিও সূত্রের খবর, ওই ঠিকানাটি সম্ভবত কীর্তনশিল্পী তথা বিধায়ক অদিতির গানের স্টুডিও। দমদম পার্ক লাগোয়া শ্যামনগরের জিএনএস সরণিতে ওই স্টুডিও রয়েছে একটি ফ্ল্যাটবাড়ির ভিতরে।
২০১৫ সাল থেকে বিধাননগর পুরসভার কাউন্সিলর দেবরাজ। তবে সেই সময় তিনি তৃণমূল ছেড়ে সাময়িক ভাবে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য আবার তৃণমূলেই ফিরে আসেন। বর্তমানে তিনি বিধাননগর পুরসভার মেয়র পরিষদও। রাজনৈতিক মহলে তাঁকে অনেকেই চেনেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে। তবে ২০১৮ সালের পর থেকে তাঁকে আরও একটি পরিচয়ে চেনে বাংলার মানুষ। তিনি শিল্পী অদিতি মুন্সির স্বামী। ২০২১ সালে তৃণমূলের টিকিটে রাজারহাট-গোপালপুর বিধাননগরের টিকিট জিতেছিলেন অদিতি। তার পর থেকে দু’জনেই হয়ে উঠেছিলেন বাংলার রাজনীতির পরিচিত মুখ।
এর আগেও এক বার দেবরাজ মুখোমুখি হয়েছিলেন সিবিআইয়ের। ২০২২ সালের অক্টেবারে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলার তদন্তে তলব করেছিল সিবিআই। দেবরাজ তলব পেয়ে সিবিআই দফতরে হাজির হয়েছিলেন। তদন্তে সহযোগিতা করবেন বলেও জানিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সেই দেবরাজের বাড়িতে হানা দিল সিবিআই। তবে সিবিআই সূত্রে খবর এই তল্লাশি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার বিষয়ে।
সকালে তৃণমূলের আরও এক কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের বাড়িতেও যান সিবিআই কর্তারা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একটি দল যায় মুর্শিদাবাদের ডোমকলের তৃণমূল বিধায়ক জাফিকুল ইসলামের বাড়িতেও। সিবিআই সূত্রে খবর, আর একটি দল গিয়েছে কোচবিহারেও।