Anubrata Mondal

গরু পাচারের টাকা কার কার কাছে গিয়েছে, দিল্লিতে ইডির টানা জেরায় প্রশ্ন অনুব্রতকে

গরু পাচারের তদন্তে নেমে অনুব্রতের শ’খানেক সম্পত্তি-জমিজমা-চালকল-ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ মিলেছে। এর মধ্যে ২৬টি সম্পত্তির মালিক সুকন্যা। যার পরিমাণ প্রায় ৫৭ কোটি টাকা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৩ ০৭:২৬
Share:

রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতাল চত্বরে অনুব্রত মণ্ডল। বুধবার নয়াদিল্লিতে। নিজস্ব চিত্র

গরু পাচারে আয়ের টাকা কোথায় গেল? কোন কোন রাজনৈতিক প্রভাবশালীর কাছে গরু পাচারের টাকা পৌঁছেছিল? কী ভাবে তা হাতবদল হয়েছিল? কী ভাবে গরু পাচারের কালো টাকা বিভিন্ন জায়গায় লগ্নি করে সাদা করার চেষ্টা হয়েছিল?

Advertisement

মূলত এই চারটি প্রশ্ন সামনে রেখেই অনুব্রত মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেন ইডি-র তদন্তকারী অফিসারেরা।

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে মঙ্গলবার দোলযাত্রার রাতে অনুব্রত মণ্ডলকে ইডি দিল্লিতে নিজেদের হেফাজতে নিতে পেরেছিল। গভীর রাতে দিল্লির বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক রাকেশ কুমারের বাড়িতে অনুব্রতকে হাজির করানো হয়। রাত দু’টোরও পরে অনুব্রতকে নিয়ে ইডি-র অফিসারেরা এ পি জে আব্দুল কালাম রোডে ইডি-র সদর দফতরে ঢোকেন। বুধবার দুপুরে রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো হয়। তারপর থেকেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতিকে রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে তোলা হবে। সেখানে ইডি ফের অনুব্রতকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চাইবে। তার আগে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আড়াই দিনে যতটা সম্ভব জিজ্ঞাসাবাদ সেরে ফেলতে চাইছেন ইডি-র অফিসাররা। তার জন্য ইডি-র স্পেশাল ডিরেক্টর সনিয়া নারাং, অ্যাস্টিট্যান্ট ডিরেক্টর পঙ্কজ কুমারের নেতৃত্বে দল তৈরি হয়েছে। অনুব্রতের শারীরিক অবস্থা নিয়ে ইতিমধ্যেই তাঁর আইনজীবীরা প্রশ্ন তুলে রেখেছেন। ইডি-র হেফাজতে থাকার সময় তৃণমূল নেতার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তার দায় তদন্তকারীদের উপরে এসে পড়তে পারে। তাই পুরো জিজ্ঞাসাবাদের পর্বই ভিডিয়ো রেকর্ডিং করে রাখা হবে।

Advertisement

ইডি সূত্রের অভিযোগ, গরু পাচারের একটা বড় অংশের টাকা যে অনুব্রত মণ্ডলের ঝুলিতে গিয়েছিল, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটাই সব নয়। বাকি টাকা রাজ্যের রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের কার কার কাছে, কোথায়, কী ভাবে পৌঁছেছে, সেটাই অনুব্রতের কাছে মূল প্রশ্ন। এ বিষয়ে গরু পাচার কাণ্ডের ‘মাথা’ এনামুল হক, অনুব্রতের কন্যা সুকন্যা, দেহরক্ষী সেহগাল হোসেন, হিসাবরক্ষক মণীশ কোঠারি, অনুব্রতের ঘনিষ্ঠ চালকল ব্যবসায়ী রাজীব ভট্টাচার্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যে তথ্য, নথি মিলেছে, তার ভিত্তিতে অনুব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সূত্রের দাবি, গরু পাচারকারীদের রক্ষাকবচের বিনিময়ে টাকা তুলতেন অনুব্রত। কিন্তু সেই টাকা উপরমহলেও পৌঁছে যেত। সেই টাকার গতিপথেরই খোঁজ করা হবে।

গরু পাচারের তদন্তে নেমে অনুব্রতের শ’খানেক সম্পত্তি-জমিজমা-চালকল-ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ মিলেছে। এর মধ্যে ২৬টি সম্পত্তির মালিক সুকন্যা। যার পরিমাণ প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। সুকন্যার ব্যাঙ্কে ৬ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট, সাত বছরে ১২ কোটি টাকার জমি কেনার সন্ধান মিলেছিল। সুকন্যাকে দিল্লিতে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। ইডি সূত্রের দাবি, তিনি কিছুরই উত্তর দিতে পারেননি। সবটাই বাবা জানেন বলে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। এ বার অনুব্রতকেই সেই প্রশ্ন করা হবে।

অনুব্রতের আইনজীবী মুদিত জৈন মঙ্গলবার রাতেই বলেছিলেন, অনুব্রতের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। কলকাতা থেকে নিয়ে আসার পরে তাঁকে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি। পরে পাঁচ মিনিটের জন্য মাত্র এক জন স্বাস্থ্যপরীক্ষা করেছেন। মেডিক্যাল রিপোর্টে শ্বাসকষ্টের কথা লেখা হয়নি বলে অনুব্রত তাঁকে জানিয়েছেন। অনুব্রতের চোখ-মুখ দেখে শারীরিক অবস্থা ভাল ঠেকছে না বলেও তিনি বিচারককে জানিয়েছিলেন।

এমনিতেই মঙ্গলবার ভোরে আসানসোল জেল থেকে বেরোনোর পরে বুধবার ভোররাতে ইডি-র দফতরে পৌঁছে বিশ্রামের সুযোগ পান অনুব্রত। প্রথমে ইডি তাঁকে রাত সাড়ে ১১টায় ভিডিয়ো কনফারেন্সে বিচারকের সামনে হাজির করিয়েছিলেন। কিন্তু অনুব্রতের আইনজীবী মুদিত জৈন তাঁকে বিচারকের সামনে সশরীরে হাজির করানোর দাবি তোলেন। তিনি মক্কেলের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথাও বলতে চান। ফলে মঙ্গলরাত রাত ১টার পরে অনুব্রতকে বিচারকের বাড়িতে হাজির করানো হয়।

বিচারক রাকেশ কুমার তাঁকে তিন দিনের জন্য ইডি হেফাজতে রেখে শুক্রবার ফের আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। অনুব্রতদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁর কোনও এক জন আইনজীবী ইডি দফতরে হাজির থাকবেন। যদিও তিনি কোনও কথাবার্তা শুনতে পাবেন না। ইডির তরফে বিচারককে জানানো হয়েছিল, এই মামলায় ৩-৪ জন অভিযুক্তকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা এখন জেলে। চার্জশিটও দায়ের হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement