Anubrata Mandal

Anubrata Mondal: ল্যাংচা খেলেন? শক্তিগড়ে অনুব্রত বললেন, আমার সুগার আছে জানো না?

বুধবার সকালেই অনুব্রতকে নিয়ে নিজাম প্যালেস থেকে আসানসোল আদালতের উদ্দেশে রওনা হয় সিবিআই। শক্তিগড়ে কেষ্টকে নিয়ে তাঁরা ঢোকেন রেস্তরাঁয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২২ ১১:০৪
Share:

অনুব্রত মণ্ডলকে বুধবার সকালে প্রাতরাশ করাতে নিয়ে যাওয়া হয় একটি ধাবায়। ফাইল চিত্র।

নিজাম প্যালেস থেকে আসানসোলের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন সাতসকালে। বেলা ১০টা নাগাদ অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে সিবিআইয়ের গাড়িবহর আচমকাই থেমে গেল শক্তিগড়ে। কী ব্যাপার? জানা গেল অনুব্রত প্রাতরাশ সারবেন।

Advertisement

এই এলাকার বিখ্যাত মিষ্টি ল্যাংচা। হাইওয়ের ধারে সেই মিষ্টির একের পর এক দোকানও রয়েছে। সড়কপথে কলকাতা থেকে বর্ধমানের দিকে যাওয়ার সময় এ-জায়গায় এসে গাড়ির চাকার গতি আপনা থেকেই কমে যায়। জনপ্রিয় মিষ্টির স্বাদ নিয়ে প্যাকেটে ভরে সঙ্গে নিয়ে যান যাত্রীরা। অনুব্রত যদিও তেমন আম-যাত্রী নন। তাঁকে কলকাতা থেকে তখন আসানসোল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আদালতে তোলার জন্য। কয়েক ঘণ্টা পর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই তাঁকে জেলে ভরার অনুমতি চাইবে আদালতে এবং সেই অনুমতি পেয়েও যাবে। তবে তার আগে অনুব্রতকে যথাযথ প্রাতরাশ করাতে শক্তিগড়েই থামল সিবিআই। যদিও ল্যাংচার দোকানে নয়।

অনুব্রতকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ল্যাংচা খেলেন না? জবাবে বীরভূমের দাপুটে নেতা সংবাদ মাধ্যমকে পাল্টা বলেন, ‘‘আমার সুগার আছে জানো না?’’

Advertisement

মধুমেহ রোগের রোগী কেষ্ট। শর্করা তাঁর কাছে বিষের সমান। ঘনিষ্ঠরা বলেন, এই রোগ নিয়ন্ত্রণে নাকি নিয়মিত সকালে খালি হাতে কিছু ক্ষণ শারীরিক কসরত করেন বীরভূমের তৃণমূল নেতা। খাবারও যে বাছাই করে খান, তা জানা গিয়েছিল অনুব্রত সিবিআই হেফাজতে থাকাকালীনই। সিবিআইয়ের দেওয়া মশলাদার খাবার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। বদলে তাঁর জন্য আনতে হয়েছিল মশলা ছাড়া খাবার। নিজাম প্যালেসে থাকাকালীন গত ১৪ দিন ধরে ওই খাবারই খেয়েছেন কেষ্ট। সেই কেষ্ট শক্তিগড়ে কোথায় খেলেন, কী খেলেন, প্রশ্ন উঠেছিল। সকাল থেকে তার উত্তরে চা-মুড়ি, চা-কচুরি এমনকি ল্যাংচা খাওয়ার কথাও শোনা যায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। তবে অনুব্রতের প্রাতরাশের থালায় আসলে কী ছিল তা জানা গেল একটু পরে।

ধাবার সামনে অনুব্রত। প্রহরায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। ছবি: টুইটার থেকে।

বুধবার ২ নম্বর জাতীয় সড়কে শক্তিগড়ের ল্যাংচার দোকানের সারি পেরিয়ে বর্ধমানের উল্লাসমোড় ঢোকার মাইল খানেক আগে অনুব্রতকে নিয়ে সিবিআইয়ের গাড়িবহর থামে একটি ধাবার সামনে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে সেই ধাবার ভিতরেই অনুব্রতকে নিয়ে ঢোকেন সিবিআই কর্তারা। প্রথমে অনুব্রতের হাত ধরে গাড়ি থেকে নামানো হলেও পরে অনুব্রতকে নিজেই হেঁটে ঢুকতে দেখা যায় বাতানুকূল রেস্তরাঁর ভিতরে। কী খেয়েছিলেন কেষ্ট সেখানে? মিষ্টি খাননি। মুড়ি কিংবা কচুরিও নয়। চিনামাটির প্লেটে সাদা ন্যাপকিনের উপর দু’টি ডালপুরি এবং সঙ্গে সাদা কাচের বাটিতেই ডাল দেওয়া হয়েছিল তৃণমূল নেতাকে। এর সঙ্গে ছিল এক কাপ লিকার চা। টি-ব্যাগ দিয়ে সেই চা-ও দেওয়া হয়েছিল সাদা চিনামাটির কাপেই। অনুব্রত দু’টি ডালপুরিই খেয়েছেন। তবে সঙ্গের ডাল বেশি খাননি। চা-ও পুরোটাই শেষ করেছেন— জানিয়েছেন ওই ধাবার কর্মচারীরা।

ধাবায় খেয়ে যাওয়ার পর অনুব্রতের টেবল। নিজস্ব চিত্র।

ওই ধাবা সূত্রেই জানা গিয়েছে, প্রায় আধ ঘণ্টা সেখানে ছিলেন অনুব্রত। সেই সময়টুকু ধাবার ভিতরে মাছিও গলতে দেননি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। গোটা এলাকাটাই সেই সময়ে ঘিরে রেখেছিল সিআইএসএফ। অনুব্রতকেও ধাবার মূল অংশে খাওয়াদাওয়া না করিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বাতানুকূল কেবিনে। যদিও এর পরও অনুব্রতের আসার খবর ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় তৃণমূল সমর্থকেরা এসে হাজিরও হন এলাকায়।

তবে গোটা ঘটনায় যা চোখে পড়ার মতো, তা হল অনুব্রতের জন্য সিবিআই কর্তাদের যত্ন। সাতসকালে আসানসোলের উদ্দেশে রওনা হওয়ায় সম্ভবত বুধবার অনুব্রতকে প্রাতরাশ করানোর সময় পাননি তাঁরা। তাই বাতানুকূল রেস্তরাঁয় ভাল খাবার জায়গা পেতেই বীরভূমের তৃণমূলের নেতাকে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে। জওয়ানদের ঘেরাটোপ তো ছিলই। তবে তার মধ্যেই অনুব্রতের হাত ধরে তাঁকে গাড়ি থেকে বের করে রেস্তরাঁর দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায় সিবিআই কর্তাদের। বীরভূমের তৃণমূল নেতা যাতে অভুক্ত অবস্থায় কোর্টে না যান, এবং তার জেরে যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়েন সে দিকে যথাযথ নজর ছিল তাঁদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement