প্রতীকী ছবি।
সংক্রমণ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। জেলায় দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সেই সংখ্যাটা সব থেকে বেশি দমদম এবং ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অবস্থায় পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে সংক্রমিতদের আলাদা করলেই সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙা যাবে। পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে এ বার উত্তর ২৪ পরগনা স্বাস্থ্য জেলায় সাড়ে ন’হাজার অ্যান্টিজেন কিট আনা হয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী দিনে আরও কয়েক হাজার কিট জেলায় পাঠানো হবে। একই সঙ্গে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আশা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পাঠিয়ে নাগরিকদের স্বাস্থ্যের খবর নেওয়া হবে। জ্বর বা অন্য কোনও উপসর্গ থাকলে তাঁদের পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনতে হবে। এক দিকে যেমন অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হবে, আবার অন্য দিকে ডেঙ্গির উপসর্গ থাকলে তাঁদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষাও করানো হবে।
গত এক সপ্তাহে জেলায় সংক্রমণের হার এক লাফে অনেকটাই বেড়েছে। আগে গড়ে যেখানে দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৫৫০ মতো, গত সপ্তাহে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫০। গত বুধবার জেলায় সংক্রমিতের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। যা কলকাতায় সে দিনের সংক্রমিতের প্রায় সমান। তার পর থেকে রোজই সংক্রমিতের সংখ্যা কলকাতার কাছাকাছি থাকছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সংক্রমণের সংখ্যা সব থেকে বেশি শহরতলি এলাকায়। গ্রামাঞ্চলে সংক্রমণের হার তুলনায় অনেকটাই কম।
এই অবস্থায় পরীক্ষা বাড়ানো ছাড়া কোনও উপায় নেই। লালারস পরীক্ষার ফল জানতে দু’দিন, কখনও কখনও তারও বেশি লেগে যাচ্ছে। ফলে অ্যান্টিজেন কিট ছাড়া সংক্রমণের হদিস দ্রুত পাওয়া সম্ভব নয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় জানান, মোট সাড়ে ন’হাজার কিট তাঁদের হাতে এসেছে। সেই কিটগুলি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে পাঠানো হবে। পরে আরও কিট আসছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কিটের বেশির ভাগই পাঠানো হচ্ছে দক্ষিণ দমদম এবং ব্যারাকপুরের শিল্পাঞ্চলগুলির পুরসভা এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে।
চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের পর্যবেক্ষণ, যে সমস্ত এলাকায় সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত, সেখানে মৃদু উপসর্গযুক্ত এবং উপসর্গহীন আক্রান্ত অনেকেই রয়েছেন। মৃদু উপসর্গযুক্তদেরও লালারস পরীক্ষায় অনীহা রয়েছে। আর উপসর্গহীনদের হদিসই মিলছে না। তাঁরাও ইচ্ছেমতো ঘোরাঘুরি করছেন। ফলে সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। সেই জন্যই যেখানে সংক্রমণ বেশি, সেই এলাকাগুলিতে শিবির করে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হবে। ফলে আগামী কয়েক দিনে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে।
বহু এলাকায় অসুস্থদের বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরের নজরেই আসছে না। অনেকেই উপসর্গ গোপন করছেন। ফলে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে এলাকাতেও। এ বার তাঁদের হদিস পেতে আশাকর্মীদের কাজে লাগাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সদস্যদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন। কোনও সন্দেহজনক রোগীর সন্ধান মিললে তাঁদের পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনা হবে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, এ ভাবে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা করে ডেঙ্গি আক্রান্তদের চিকিৎসায় সাফল্য এসেছিল। করোনা-আক্রান্তদের ক্ষেত্রেও কাজে আসবে এই সমীক্ষা। এ ক্ষেত্রে ডেঙ্গি রোগীদেরও হদিস মিলবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)