সুব্রত ও মৌসুমী নাগ। নিজস্ব চিত্র
দুপুরে বাড়িতেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি। ছিলেন দুই পরিচারিকা ও এক আয়া। তাঁদের অভিযোগ, আচমকা সেখানে হাজির হয়ে মাস শেষ হওয়ার আগেই বেতন চান পরিবারের গাড়ির চালক তপন দাস। ‘মাস পড়লে বেতন মিলবে’ শুনে ঘরের কোণে রাখা লাঠি নিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করেন ওই দম্পতিকে। সোমবার বর্ধমান সদরের খোসবাগানে ওই ‘হামলায়’ গুরুতর আহত হন পেশায় অ্যানাস্থেটিস্ট সুব্রত নাগ ও তাঁর স্ত্রী মৌসুমী নাগ। পরে বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান মৌসুমীদেবী (৬২)।
পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুনের ঘটনায় ওই চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, আজ, মঙ্গলবার ধৃতকে আদালতে হাজির করানো হবে।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, সুব্রতবাবুর গাড়ি গত কুড়ি বছর ধরে চালাচ্ছেন বছর চল্লিশের তপন। ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী, এক পরিচারিকা সাবিত্রী হাজরার দাবি, ‘‘তপন খুব উত্তেজিত ছিল। মাস পড়লে বেতন দেওয়া হবে শুনে ঘরে রাখা কুকুর তাড়ানোর লাঠি নিয়ে ডাক্তারবাবু ও তাঁর স্ত্রীর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে মারতে শুরু করে।’’ তাঁর অভিযোগ, ঘরে হাজির আয়া ফিরোজা বিবি বাধা দিতে গেলে তাঁকেও মারধর করেন তপন। বাড়িতে ঢোকার দরজাও বন্ধ করে দেন। ওই সময় আর এক পরিচারিকা জবা প্রামাণিক ছাদে উঠে পড়শিদের ডাকাডাকি শুরু করেন। প্রতিবেশীরাই দরজা ভেঙে উদ্ধার করেন তাঁদের। মৌসুমীদেবীর বাপের বাড়িতে খবর দেন।
খোসবাগানের বাড়িটিতে এ দিন গিয়ে দেখা যায়, মেঝের নানা জায়গায় রক্তের দাগ। জবাদেবীর দাবি, ‘‘বেশি টাকা চাওয়া নিয়ে আগেও তপনের সঙ্গে ডাক্তারবাবুর ঝামেলা হয়েছে। পুজোর পরেও কথা কাটাকাটি হয়েছিল। সে বারও তপন মৌসুমীদেবীর গলা টিপে ধরেছিল। পরে ক্ষমা চেয়ে মিটিয়ে নেয়।’’ পরিচারিকাদের দাবি, প্রতি মাসেই ঠিক সময়ে সবাইকে বেতন দিতেন বছর আটষট্টির সুব্রতবাবু। বর্ধমান মেডিক্যাল হয়ে, তাঁকে রাতে একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। মৌসুমীদেবীর বাবা অনিলকুমার গুহ বলেন, ‘‘ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসি। পরিচারিকা বলছে, ‘ড্রাইভার মেরেছে ওদের’। আর কিছু জানি না।’’
পুলিশ জানিয়েছে, তপনের বাড়ি বর্ধমান শহরের বাবুরবাগে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, থোক টাকা চাওয়া নিয়েই গোলমাল। তবে অন্য কারণ রয়েছে কি না, ধৃতকে জেরা করে জানার চেষ্টা চলছে।