এই প্রথম। গঙ্গার দু’ধারে উপনগরী গড়ার দরজা খুলে দিচ্ছে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানিয়েছেন, বন্দর-সহ শহর কলকাতার আশপাশে ৭০০ একর ফাঁকা জমি চিহ্নিত হয়েছে। হলদিয়াতেও রয়েছে অন্তত ২০০০ একর জমি। এই সব জমি আবাসন ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করে মোটা টাকা রোজগারের পথ খোঁজা হবে।
এত দিন বন্দরের জমিতে আবাসন, উপনগরী, বহুতল বাণিজ্যিক কেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হত না। বন্দরের এক কর্তা জানান, মূলত শেড-গোডাউন তৈরির জন্যই এই জমি ‘লিজ’ দেওয়া হতো। নাব্যতার সমস্যায় কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে কলকাতা বন্দরে পণ্য খালাস কমে গিয়েছে। আর তাতে কোপ পড়েছে উপার্জনে। আয়ের বিকল্প পথ তৈরি করতেই তাই আবাসন তৈরির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্তা। দুই শহরে ওই জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ-এ দিয়ে অন্তত এক হাজার কোটি টাকা আয় হবে বলে মনে করছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার এক বণিকসভার অনুষ্ঠানে কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান রাজপাল সিংহ কাহালোঁ বলেন, ‘‘আমাদের হাতে কলকাতায় ৭০০ একর এবং হলদিয়ায় ২০১৪ একর ফাঁকা জমি রয়েছে। সেই জমিতে আবাসন, বাণিজ্য কেন্দ্র, তথ্যপ্রযুক্তি উপনগরী এবং গঙ্গার দু’পাড় সাজাতে লিজ দেওয়া হবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ বন্দরের জমির বিকল্প ব্যবহার নিয়ে একটি পরিকল্পনা করছে। সেই রিপোর্ট কিছু দিনের মধ্যেই জমা পড়বে।’’
কাহালোঁর বক্তব্য— শুধু গঙ্গার দু’ধার নয়, কলকাতার আশপাশে চেতলা, পোর্টল্যান্ড পার্ক, তারাতলা এলাকা এবং হাওড়ার দিকেও বন্দরের অনেক খালি জমি রয়েছে। এই সব জমি বাণিজ্যিক কাজ ও আবাসনের জন্য উপযুক্ত। শুধুমাত্র কলকাতার জমি লিজ দিয়েই ৭০০ কোটি টাকা আয় হবে বন্দরের। হলদিয়া থেকে আয় হতে পারে আরও ২০০ কোটি টাকা। তবে নিলামে জমি বিক্রি হলে এর কয়েক গুণ বেশি আয় সম্ভব বলে মনে করছেন তাঁরা।
নাব্যতার সঙ্কটে লোকসানের দিকে এগোতে থাকা বন্দরকে ঘুরে দাঁড় করাতে বেশ কিছু পদক্ষেপও করতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। বন্দর চেয়ারম্যান জানান— কী ভাবে কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরে আরও পণ্য আনা সম্ভব, তা খতিয়ে দেখতে ম্যাকিনসে-কে এবং বন্দরের আধুনিকীকরণ নীতি তৈরি করতে আমেরিকার বস্টন কনসালট্যান্ট গ্রুপ-কে উপদেষ্টা সংস্থা নিয়োগ করা হয়েছে। তবে বন্দরের একাংশ মনে করেন, আয় বাড়াতে ফাঁকা জমি লিজ দেওয়ার বন্দোবস্ত করার সিদ্ধান্ত নিশ্চই স্বাগত। কিন্তু একই কারণে জমি-জবরদখলকারীদের থেকে টাকা আদায় জরুরি। বন্দর সূত্রের খবর, জবরদখলকারীদের থেকে তাদের পাওনা হয়েছে প্রায় ১২০০ কোটি। বছরের পর বছর তাগাদা দিয়েও তা আদায় হচ্ছে না। বন্দর চেয়ারম্যান অবশ্য আত্মবিশ্বাসী, ‘‘জবরদখলকারীদের থেকেও টাকা আদায় করা হবে।’’