— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কলকাতা পুলিশে কর্মী-সঙ্কট দীর্ঘ দিনের। তার মধ্যে কনস্টেবল পদে বহু দিন নিয়োগ না হওয়ায় বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার পদ খালি। তার উপরে ভাঙড়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে গিয়ে শহরের বিভিন্ন থানা থেকে সেখানে পুলিশকর্মীদের নিয়ে যাওয়ায় সঙ্কট বেড়েছে। বাহিনীতে নিচুতলার কর্মীর অভাব প্রভাব ফেলছে যানশাসন, থানার কাজ ও টহলদারিতে। তাই দ্রুত সমস্যা মেটাতে কলকাতা পুলিশ দু’দফায় প্রায় ছ’হাজার পদে কনস্টেবল নিয়োগ করতে চলেছে। প্রথম দফায় ২২২০ জনকে নিয়োগ করা হবে। ইতিমধ্যেই তাঁদের শারীরিক ও লিখিত পরীক্ষা হয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে ইন্টারভিউ শুরু হওয়ার কথা।
এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, কনস্টেবল পদে ১৫০০ জন পুরুষ এবং ৭০০ জন মহিলার নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। ওই পদের জন্য ১২ দিন ধরে ছ’টি জায়গায় ইন্টারভিউ নেওয়া হবে। তার মধ্যে দু’জায়গায় কলকাতা পুলিশের আধিকারিকেরা ইন্টারভিউ নেবেন। এর পরেই উত্তীর্ণদের প্রশিক্ষণে পাঠানো হবে। তবে কোথায় প্রশিক্ষণ হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলেই জানিয়েছেন ওই পুলিশকর্তা।
এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার মধ্যেই আরও ৩৭৭০টি কনস্টেবল পদে (যার মধ্যে ২৭০টি পদ মহিলাদের) নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বেরোনোর কথা রয়েছে। লালবাজার সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটের আগেই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে দিতে চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, কলকাতা পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর পদে আড়াইশো জনের বেশি কর্মী নিয়োগ শেষ হয়েছে। বর্তমানে তাঁদের প্রশিক্ষণ চলছে। এই সব নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে অবস্থা কিছুটা সামাল দেওয়া যাবে বলে পুলিশ আধিকারিকেরা মনে করছেন।
দিন দশেক আগেই কলকাতা পুলিশে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ভাঙড়ের চারটি থানা এবং একটি ট্র্যাফিক গার্ড। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে লালবাজারের তরফে ভাঙড়কে আলাদা ডিভিশন করে দেওয়া হয়েছে। আপাতত সেখানে চারটি থানার উদ্বোধন হয়েছে। পরে আরও চারটির উদ্বোধন হবে। সেই সঙ্গে শহরের একাধিক থানা থেকে কনস্টেবল, এএসআই, এসআই-সহ ইনস্পেক্টর পদাধিকারীদের ভাঙড়ে বদলি করা হয়েছে। এতে কর্মী-সঙ্কট আরও বেড়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট থানাগুলির।
ইস্ট ডিভিশনের একটি থানার এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর বলেন, ‘‘সোমবার সারা দিন ডিউটি সেরে রাতে ফিরেছিলাম। মঙ্গলবার রাতে ডিউটি ছিল। সকালে ফোন এল থানা থেকে। দুপুরে থানায় ঢুকে রাতের ডিউটি সেরে পরদিন দুপুরে বেরোতে হয়েছে। বাড়ি ভুলে থানায় থেকে গেলেই ভাল হয়!’’ একই কথা সাউথ-ইস্টার্ন ডিভিশনের এক থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের। তাঁর কথায়, ‘‘নিচুতলার কর্মীর সংখ্যা অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় থানার কাজ-সহ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বাহিনী তৈরি রাখতে হচ্ছে। রোজ মিটিং-মিছিল আছেই।’’
লালবাজারের কর্তারা যদিও সমস্যার কথা মানতে নারাজ। তাঁদের যুক্তি, থানা থেকে যতটা সম্ভব কম পুলিশকর্মী ভাঙড় ডিভিশনে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে ৫০০ জন কনস্টেবল এবং ৫০ জন অফিসারকে রাজ্য পুলিশের থেকে ডেপুটেশনে চেয়েছিল লালবাজার। সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে, রাজ্য পুলিশের তরফে কলকাতা পুলিশকে দেওয়া হচ্ছে সব মিলিয়ে ৫২ জনকে।