কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। —ফাইল চিত্র।
কলেজের নিজস্ব আড়াইশো ছাত্রছাত্রীকে পড়ানোর দায়িত্ব তো রয়েইছে। সেই সঙ্গে রয়েছে রোগী দেখা। তার উপরে গত দু’মাস ধরে আউটডোর-ইন্ডোরে উপচে পড়ছে জ্বরের রোগীর স্রোত। দম ফেলার ফুরসত নেই চিকিৎসকদের। এরই মধ্যে আচমকা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এক নতুন বেসরকারি ডেন্টাল কলেজের প্রথম বর্ষের ১০০ ছাত্রছাত্রীকে পড়ানোর দায়িত্ব দিয়ে বসেছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসকদের!
এতেই ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছে চিকিৎসকদের। ক্ষোভে ফেটে পড়ে তাঁদের একাংশ সরাসরি রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্যসচিবকে যথাক্রমে গত ২৩ অক্টোবর ও ৮ নভেম্বর দু’টি চিঠি লিখে এর ব্যাখ্যা দাবি করেছেন। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, কোনও বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে যদি প্রয়োজনীয় পঠনপাঠনের পরিকাঠামো না থাকে, তা হলে সেই ঘাটতি চাপা দিতে কেন সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ঘাড়ে সেই দায়িত্ব দেওয়া হবে? তাঁদের আরও প্রশ্ন, কোনও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে যদি শিক্ষক সংখ্যা বা পরিকাঠামোয় ঘাটতি থাকে, তা হলে তারা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামো ধার করে তা মেটায় না। ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’-ও (এমসিআই) সেই অনুমতি দেয় না। তা হলে বেসরকারি ডেন্টাল কলেজের ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যতিক্রম কেন?
জবাব আসেনি। কিন্তু ৭ নভেম্বর স্বাস্থ্য ভবন থেকে স্বাস্থ্য-শিক্ষা বিভাগের বিশেষ সচিব তমাল ঘোষ ই-মেল করে চিকিৎসকদের জরুরি ভিত্তিতে নির্দেশ পালন করতে বলেছেন। ৮ নভেম্বর ওই বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ থেকে ১০০ জন ছাত্রছাত্রী মেডিক্যালে ক্লাস করতেও চলে এসেছেন। তাতে আগুনে ঘি পড়েছে এবং পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এমনকী, বড়সড় প্রতিবাদের পথে হাঁটারও পরিকল্পনা করছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষক-চিকিৎসকেরা। একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আবার চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথাও ভাবছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘অমানুষিক চাপ তৈরি হয়েছে আমাদের উপরে। এ ভাবে কাজ করা যায় না।’’ ওই চিকিৎসকদের দাবি, নিকট অতীতে কখনও কোনও বেসরকারি ডেন্টাল কলেজের পঠনপাঠন এ ভাবে কোনও সরকারি মেডিক্যাল কলেজে হয়নি। আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের কিছু পঠনপাঠন নীলরতনে হয়েছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে দু’টোই সরকারি হাসপাতাল।
কলকাতার কাশীপুর অঞ্চলে ‘কুসুমদেবী সুন্দরলাল দুগ্গর জৈন ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল’ নামে একটি বেসরকারি দাঁতের মেডিক্যাল কলেজ চলতি বছর প্রথম স্নাতক স্তরে ১০০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তির অনুমোদন পেয়েছে ডেন্টাল কাউন্সিল থেকে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, ডেন্টালে প্রথম বছর মেডিক্যালের সাধারণ কিছু বিষয় পড়তে হয়। যেমন, অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, প্যাথোলজি, মেডিসিন, সার্জারি। গত ১১ অক্টোবর রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ তপন লাহিড়ীকে একটি লিখিত নির্দেশে জানান, কুসুমদেবী সুন্দরলাল দুগ্গর ডেন্টাল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা মেডিক্যালে কিছু বিষয়ের পঠনপাঠন করবেন ও প্রশিক্ষণ নেবেন। এর পরেই যাবতীয় সমস্যার সূত্রপাত।
ডেন্টাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া-র সভাপতি দিব্যেন্দু মজুমদার অবশ্য স্বাস্থ্য ভবনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বলেছেন, ‘‘কোনও বেসরকারি ডেন্টাল কলেজের পঠনপাঠনের পরিকাঠামোয় কিছু ঘাটতি থাকলে অন্য কোনও সরকারি বা বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পঠনপাঠন ভাগাভাগি করে দু’জায়গায় চলতে পারে।’’
মেডিক্যালের ক্ষুব্ধ শিক্ষক-চিকিৎসকেরা পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ২৫০ ছাত্রছাত্রীর পঠনপাঠনের পরিকাঠামো নিয়ে কী করে অতিরিক্ত ১০০ ছাত্রছাত্রী পড়ানো যেতে পারে? এমসিআই কী করে তার অনুমোদন দেবে? কারণ, এমনিতেই মেডিক্যাল কলেজগুলির পরিকাঠামোয় সামান্যতম খামতি দেখলে তাঁরা নতুন ছাত্র-ভর্তির অনুমতি বাতিল করে দেয়। এমসিআই-কে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সেখানকার এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি।’’