গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
আরজি করের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ দায়েরের এক বছর পরে কেন তদন্ত করার কথা মনে হল? কলকাতা হাই কোর্ট প্রশ্ন করল রাজ্য সরকারকে। আরজি করের আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে সম্প্রতিই একটি মামলা দায়ের হয়েছে হাই কোর্টে। সেই সূত্রেই রাজ্যের কাছে ওই প্রশ্নের জবাব চেয়েছেন বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ। জবাব দেওয়ার জন্য রাজ্যকে ২৪ ঘণ্টা সময়ও বেঁধে দিয়েছেন বিচারপতি। শুক্রবারই মামলাটির পরবর্তী শুনানি।
আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি একাধিক অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে দু’টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে একটি করেছেন সন্দীপের প্রাক্তন সহকর্মী তথা আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। অন্য মামলাটি করেন আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত। বৃহস্পতিবার ওই দুই মামলার মধ্যে প্রথমটির শুনানি হয় বিচারপতি ভরদ্বাজের বেঞ্চে।
আখতারের আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি আদালতকে বলেছিলেন, ‘‘সন্দীপের বহু দুর্নীতির অভিযোগ রাজ্যের দুর্নীতি দমন শাখাকে জানিয়েও লাভ হয়নি। এক বছর পরে এখন সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিট গঠন করছে রাজ্য। তাই সিট-এ ভরসা না করে এ বিষয়ে ইডিকে দিয়ে তদন্ত করানো হোক। বৃহস্পতিবার আখতারের ওই আবেদন প্রসঙ্গেই রাজ্যকে প্রশ্ন করে আদালত। বিচারপতি জানতে চান, ‘‘আরজি করে চিকিৎসক খুনের ঘটনার পরে কেন আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে সিট গঠন করল রাজ্য?’’ বিচারপতি এ-ও জানতে চান, ‘‘সিটের মাথায় এখন পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের বসানো হয়েছে। এক বছর আগে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। কেন এখন ওই বিষয়ে পদক্ষেপ করার প্রয়োজন বলে মনে হল?’’
এর জবাবে রাজ্য পাল্টা বলে, ‘‘সন্দীপের বিরুদ্ধে ওই মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে করা হয়েছে।’’ তারা এ-ও প্রশ্ন করে, ‘‘আরজি করের ঘটনার পরেই কি মামলাকারীর ঘুম ভাঙল? আগে অভিযোগ করে কাজ হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন, তা হলে আগে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হননি কেন?’’ বিচারপতি অবশ্য রাজ্যকে সিট গঠন নিয়ে প্রশ্নের জবাবের জন্য শুক্রবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে বলেছেন, ‘‘ওই দিন রাজ্যের বিস্তারিত বক্তব্য শুনবে আদালত।’’
উল্লেখ্য, আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার তাঁর প্রাক্তন সহকর্মী সন্দীপের বিরুদ্ধে টেন্ডারে পক্ষপাতিত্ব, চিকিৎসাজনিত জৈব বর্জ্যের বেআইনি বিক্রি, কাটমানি নেওয়া এবং অর্থের বিনিময়ে চিকিৎসকদের পাশ করানোর অভিযোগ এনেছিলেন। এ ব্যাপারে সরব হওয়ায় তাঁকে আরজি কর থেকে বদলিও করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘‘গত বছর ১১ জানুয়ারি হাসপাতালের মর্গ থেকে দেহ উধাও হয়ে যায়। সে ব্যাপারে মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগে জানানো হয়েছিল। তারা তলবও করেছিল সন্দীপকে। পরে ‘মেডিক্যাল ওয়েস্ট’ দুর্নীতি নিয়েও সন্দীপের বিরুদ্ধে রাজ্যের দুর্নীতি দমন শাখায় অভিযোগ জানানো হয়। কিন্তু কোনও অভিযোগেই কাজ হয়নি।’’