কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
২৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা তরুণীর গর্ভপাতের জন্য আগে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করতে বলেছিল আদালত। সেই বোর্ডের সম্মতি মিললে গর্ভপাত করা যাবে বলে জানিয়েছিলেন বিচারপতি। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করাই হল না! তার আগেই তড়িঘড়ি তরুণীর গর্ভপাত করিয়ে ফেললেন চিকিৎসকেরা। কলকাতার বাঙুর হাসপাতালের এক দল চিকিৎসকের কাছে এই ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়েছে আদালত।
গর্ভপাত করাতে চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তরুণী। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের বেঞ্চে মামলাটি ওঠে। আদালত তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কমপক্ষে দুই সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করতে বলেছিল। বিচারপতি জানিয়েছিলেন, ওই বোর্ডই তরুণীর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করবে এবং গর্ভপাত করা যাবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। সেই বোর্ডের রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার কথা ছিল।
অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেডিক্যাল বোর্ড গঠন না করেই গর্ভপাত করেছেন। আদালতে রিপোর্ট দিয়ে তাঁরা জানিয়েছেন, গর্ভপাত করানো হয়ে গিয়েছে। তাতেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আদালত। চিকিৎসকদের কাছ থেকে লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। কেন তাঁরা এত তাড়াহুড়ো করলেন, মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের নির্দেশ কেন মানা হল না, তরুণীর দ্রুত গর্ভপাত করানোর মতো শারীরিক কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল কি না, জানতে চেয়েছেন বিচারপতি।
মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের আগেই গর্ভপাতের এই সিদ্ধান্তে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ‘অতি-সক্রিয়তা’ দেখছে আদালত। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। ওই দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ব্যাখ্যা দিতে হবে।
আদালত সূত্রে খবর, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা ওই তরুণী। স্থানীয় থানায় তিনি অভিযোগও দায়ের করেছেন। তরুণীর অভিযোগ, ২০১৮ সালে এক যুবকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পর্যায়ক্রমে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় তাঁদের মধ্যে। তার পর থেকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর সঙ্গে একাধিক বার সহবাস করেছেন ওই যুবক। তরুণীর অভিযোগ, এখন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার পর ওই যুবক তাঁকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। এই পরিস্থিতিতে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে তরুণীর বক্তব্য, তিনি গর্ভপাত করাতে চান।
তরুণী আদালতে আরও জানিয়েছেন, তাঁর আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল নয়। সংসার টানতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। এই পরিস্থিতিতে তাঁর পক্ষে সন্তানের জন্ম দিয়ে তাকে বড় করে তোলা সম্ভব নয়। তার পরেই গর্ভপাতের জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।