(বাঁ দিকে) রত্না চট্টোপাধ্যায়। শোভন চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূল বিধায়ক রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বিবাহবিচ্ছেদের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে, নিম্ন আদালতকে এমনটাই নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। খারিজ করে দেওয়া হল এই সংক্রান্ত রত্নার আবেদন। নিম্ন আদালতের বিচারপ্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রত্না। শুক্রবার বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি হয়। আদালত জানিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে নিম্ন আদালতে বিষয়টি বিচারাধীন। আর অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না। দ্রুত এই মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে।
২০১৭ সালে বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে আলিপুর আদালতে মামলা করেছিলেন শোভন। রত্না জানান, তাঁর তরফে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করাই হয়নি। তার আগেই নিম্ন আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, শোভন নিজের পক্ষে সাক্ষী সাজাতে পর্যাপ্ত সময় পেয়েছেন। রত্নার তরফে মোট চার জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। দাবি, তাঁর পক্ষে আরও কয়েক জন সাক্ষী ছিলেন। এই মামলায় তাঁদের বয়ান গুরুত্বপূর্ণ। আলিপুর আদালতে এই সংক্রান্ত আবেদন জানিয়েছিলেন রত্না। সেখানে তাঁর আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। ফলে ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বেহালা পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক। হাই কোর্টে শোভনের পক্ষে এই মামলায় সওয়াল করেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মামলাতেই শুক্রবার রত্নার আবেদন খারিজ করা হল।
তৃণমূল ছাড়ার পরে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শোভন। যদিও গত বিধানসভা ভোটের অব্যবহিত পরেই পদ্মশিবিরের সঙ্গে সখ্য ঘুচে যায় শোভনের। তার পর থেকে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে নেই। তবে মমতার সঙ্গে তাঁর ‘ব্যক্তিগত সম্পর্ক’ এখনও অটুট। প্রত্যেক ভাইফোঁটায় ‘দিদি’ মমতার হাতে শোভনের ভাইফোঁটাও বাঁধা। এর মধ্যে কয়েক বার শোভনের তৃণমূলে ফেরার জল্পনাও তৈরি হয়েছে। বিশেষত, যখন তিনি বৈশাখীকে নিয়ে নবান্নে গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তখন জল্পনা আরও জোরদার হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘প্রত্যাবর্তন’ বাস্তবায়িত হয়নি। রত্না বর্তমানে শোভনেরই ছেড়ে-যাওয়া বেহালা পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক। শোভন-রত্নার বিবাহবিচ্ছেদ এবং বৈশাখীর সঙ্গে শোভনের সম্পর্ক নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে।
হাই কোর্টে এই মামলা চলাকালীন শোভনের আইনজীবী কল্যাণকে ‘হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল রত্নার বিরুদ্ধে। শুক্রবার তা নিয়েও আদালতে ভর্ৎসিত হতে হয় বিধায়কের আইনজীবীকে। আধ ঘণ্টার ব্যবধানে দু’বার রত্নাকে ক্ষমা চাইতে হয়েছে। শোভনের হয়ে কল্যাণের সওয়াল পছন্দ হয়নি রত্নার। সংবাদমাধ্যমে তা নিয়ে তিনি মুখ খুলেছিলেন। প্রশ্ন তুলেছিলেন কল্যাণের ভূমিকা নিয়ে। রত্নার সেই বক্তব্যকে ‘হুমকি’ বলে উল্লেখ করে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কল্যাণ। আদালত জানায়, রত্নাকে এর জবাব দিতে হবে। রত্নার তরফে তাঁর আইনজীবী ক্ষমা চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে ‘আন্তরিকতার অভাব’ ছিল বলে দাবি করেন শোভনের আইনজীবী। ফলে রত্নাকে দ্বিতীয় বার ক্ষমা চাইতে হয়।