Calcutta High Court

‘জেলে অন্তঃসত্ত্বা হলে মহিলা বন্দিরা আরও কলঙ্কিত হন’, সব পক্ষকে একসঙ্গে বৈঠকের নির্দেশ হাই কোর্টের

গর্ভধারণের পরীক্ষা নিয়ে আদালত নিজে থেকে কোনও নির্দেশ দেবে না বলে জানিয়েছেন বিচারপতি। বিচারপতি বাগচীর মন্তব্য, কোনও মহিলা স্বেচ্ছায় চাইলে আদালত নির্দেশ দিতে পারে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:৫৩
Share:

কলকাতা হাই কোর্ট। — ফাইল চিত্র।

রাজ্যের জেলে মহিলা বন্দিরা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনার মামলায় যুক্ত সব পক্ষকে বৈঠক করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, সব পক্ষকে নিয়ে রাজ্যকে বৈঠকে বসতে হবে। সেখান থেকে কী উঠে এল, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি)-কে তা নিয়ে আগামী ৮ মার্চ রিপোর্ট দিয়ে জানাতে হবে। পাশাপাশি, বিচারপতি এ-ও জানিয়েছেন, গর্ভধারণ সংক্রান্ত কোনও পরীক্ষা নিয়ে আদালত নির্দেশ দেবে না।

Advertisement

এই মামলায় বিচারপতির বাগচীর পর্যবেক্ষণ, ‘‘এমন ঘটনায় সমাজে কী প্রভাব পড়ে, তা আমরা জানি। এমনিতেই ওই মহিলারা জেলে রয়েছেন। সেই অবস্থায় এমন ঘটনা তাঁদের আরও বেশি কলঙ্কিত করে। ওই ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তিদের এটা মাথায় রাখা জরুরি।’’ মঙ্গলবার আদালতবান্ধব তাপস ভঞ্জের সওয়াল, জেলে ঢোকার পরে মহিলাদের পুরুষ বন্দিদের সেলের সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। মহিলাদের জন্য আলাদা রাস্তা বা প্রবেশপথ নেই। এর ফলে অনেক সময় পুরুষ বন্দিরা হায়নার মতো আচরণ করেন। এটা আটকানো দরকার। আর মহিলা কয়েদিদের নিয়মিত ‘প্রেগন্যান্সি টেস্ট’ করানো হোক।

গর্ভধারণের পরীক্ষা নিয়ে নিজে থেকে কোনও নির্দেশ দেবে না বলে আদালত জানায়। বিচারপতি বাগচীর মন্তব্য, ‘‘এমন নির্দেশ আদালত একেবারেই দেবে না। কোনও মহিলা স্বেচ্ছায় চাইলে বা কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত নির্দেশ দিতে পারে। কিছু সমস্যা রয়েছে, তা থেকে বার হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। রাজ্যের সঙ্গে সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা করুন।’’ আদালত জানায়, সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। সেখানে বন্দিদের অতিরিক্ত ভিড়, মহিলাদের অবস্থা, জেলে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, অসুস্থদের মুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করবে।

Advertisement

এই বিষয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন আদালতবান্ধব তাপস। তিনি জানিয়েছিলেন, রাজ্যের বিভিন্ন জেলে মহিলা কয়েদিরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছেন। পাশাপাশি, সংশোধনাগারে পুরুষদের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার আর্জিও উচ্চ আদালতে জানান তিনি। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন তাপস।

প্রসঙ্গত, রাজ্যের বিভিন্ন জেলের কয়েদিদের সুযোগ-সুবিধার কথা মাথায় রেখে আদালতবান্ধব নিয়োগ করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। সংশোধনাগারের মধ্যে কয়েদিরা ঠিক করে খাবার বা চিকিৎসা পাচ্ছেন কি না, তা দেখার দায়িত্ব আদালতবান্ধবের। পাশাপাশি, কয়েদিদের জীবনযাপনে কোনও অব্যবস্থা রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখার দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টে আদালতবান্ধব তাপসের জমা দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন সংশোধনাগারে ১৯৬ জন শিশু জন্ম নিয়েছে। সম্প্রতি, আলিপুর মহিলা জেলেও এক জন কয়েদি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। তাই ৮ ফেব্রুয়ারি বিচার চেয়ে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। এই ঘটনায় ৯ ফেব্রুয়ারি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা গ্রহণ করে সুপ্রিম কোর্ট। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সব রাজ্যের কাছে রিপোর্টও তলব করে শীর্ষ আদালত। জানতে চায়, জেলে মহিলারা কী অবস্থায় রয়েছেন। এ বার কলকাতা হাই কোর্ট এই মামলায় যুক্ত সব পক্ষকে একসঙ্গে বৈঠকে বসার নির্দেশ দিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement